চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সহযোগী হিসেবে ধোলাইখালের প্রকৌশলীরা সম্পৃক্ত হতে পারেন
আপডেট সময়:
শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১
৯১
দেখেছেন
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাবার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
নূন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কেবলমাত্র অভিজ্ঞতা দিয়েই গত কয়েক দশকে ধোলাইখাল এলাকায় গড়ে উঠেছে হালকা প্রকৌশল শিল্প। গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে যেকোন যন্ত্রাংশ তৈরিতে সক্ষম তারা। আমদানি করা তিন চার কোটি টাকার বিদেশি মেশিন এক কোটিতেই বানিয়ে চমক দেখালেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাজারে দখল নিতে পারছেন না তারা।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হবার পর এই হালকা প্রকৌশল শিল্পের সূচনা হয়। ঢাকার ধোলাইখালে কিছু অবাঙ্গালী মিলে এই শিল্পের যাত্রা শুরু করে। কয়েকদশক পেরিয়ে তা এখন মহীরহুতে পরিনত হয়েছে।
লায়নার, পিস্টন, বিয়ারিং থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মোটর পার্টস গাড়ির ব্রেকডাম, ইঞ্জিন, কার্টিজ, সকেট, জগ, জাম্পার, স্প্রিং, হ্যামার, ম্যাকেল জয়েন্ট, বল জয়েন্টসহ নানা মেশিনারিজ ও পার্ট্স তৈরি হচ্ছে এখানে। বর্তমানে এ শিল্পে উদ্যমী উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৮ হাজার রকমের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করছেন। ধোলাইখালে তৈরি মেশিনারি পার্টস ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া ভালো রিকন্ডিশন্ড পার্টসের জন্য ধোলাইখালের দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। পুরনো গাড়ি ভেঙেও পার্টস সংগ্রহ করা হয় এখানে। ধোলাইখালের পার্টেসর চাহিদা রয়েছে গোটা দেশে। এখানে তৈরি পার্টস ইতিমধ্যেই সারাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ মিটিয়ে এগুলো ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে।
স্বশিক্ষিত এসব প্রকৌশলীরা, কৃষি খাদ্য পক্রিয়াকরণ, তৈরী পোশাক, গাড়ী, রেলওয়ে সহ বিভিন্ন খাতের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরিতে এখন পুরোপুরি দক্ষ।
ব্যক্তি উদ্যোগ ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত তাদের এসব মেশিন চীনের তৈরি মেশিনের চেয়ে অনেকাংশে মজবুত ও মানসম্মত বলে দাবী করেন ধোলাই খালের উৎপাদনকারী প্রকৌশলীরা।
ব্যাংকিং খাতের বৈষম্য দেশীয় এই শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন তারা। জনৈক কারখানার মালিক বলেন,” বাংলাদেশে উৎপাদিত মেশিনকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরিয়ে দেন, বরং বিদেশী ম্যাশিনারিজসমূহে অর্থ লগ্নি করতে ততোধিক উৎসাহী রাষ্ট্রয়াত্ব ও তফসীলিভুক্ত ব্যাংকসমূহ।
এই হালকা প্রকৌশল শিল্পকে এগিয়ে নিতে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা কথা বলছে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন,
” দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে আমরা এই হালকা প্রকৌশল উদ্যক্তাদের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি এবং তাদের কাউন্সিলিং করছি।
যদিও করোনা মহামারী এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলো। আশা করি সব বাধা কেটে যাবে”।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
মো. মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, ” ধোলাই খালের স্থানীয় স্বশিক্ষিত প্রকৌশলীদের উৎপাদিত মেশিনারিজদের মানের বিষয়টি অবহেলা করার মত নয়, যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যদি তারা মান বজায় রেখে উৎপাদন করতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেই সুযোগ আছে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন তাদের কে আরো দক্ষ করে তুলতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায়,একটি রিচার্স সেন্টার গড়ে তুলতে পারলে দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের দিকেই যাবে।’
ধোলাইখালের এ সকল স্বশিক্ষিত প্রকৌশলীদের উদ্যোগকে মূল ধারার প্রকৌশল শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত করতে ও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিভাগ ও অধিদপ্তর কে কর্মপরিকল্পনা প্রনোয়ন করে এগিয়ে আসতে হবে।
কারন দেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটি মূলত অটোমেশন নির্ভর হবে।
Leave a Reply