আমাদের আদিপিতার কোনো শৈশব ছিল না। সেজন্য তার শৈশবের কোনো ইতিহাস নেই। ওই একজনই শৈশব-বিহীন মানুষ। তাঁর সৃজন হয়েছিল নব যৌবনের নুর-শিখার ঔজ্জ্বল্যে। সেই যৌবনও ছিল পৌরুষের প্রতাপ ও কাম-কলার জ্ঞান বিবর্জিত। একাকী জীবন তাঁর। সময় কাটে না, একা একা ঘুরে বেড়ান ফুল আর ফলসম্ভার সজ্জিত উদ্যানে। স্রষ্টা সবজান্তা, তিনি মানবের মনে আবেগের প্রয়োজন অনুভব করেন। আবেগ দিলেন। মানবের সৃষ্টির আগে জ্বিন সৃষ্টি করেন। জ্বিন পুরুষের জন্য জ্বিন নারী সৃষ্টি করেন। কিন্তু প্রথম মানব, আমাদের আদিপিতা যাকে তিনি তাঁর বিবেচনায় সবচেয়ে সুন্দর করে নিজ হাতে সৃজন করলেন তার জন্য মানবী সৃষ্টি করলেন না, তার মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা-ঘৃণা, শিল্পরস,সাহিত্যরস,আবেগ-অনুভূতি দিলেন না, ব্যাপারটা কেমন না যেন!
বোধবুদ্ধিহীন আদমকে সিজদাহ্ করার জন্য স্রষ্টা ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন। ফেরেশতারা সিজদাহ্ করলেন। কিন্তু তাদের নেতা আজাজিল সে আদেশ মানলেন না। আজাজিল দম্ভ করলেন। তিনি আগুনের তৈরি, তার স্বভাব উর্ধধমূখী,আর আদম মাটির ঢেলায় তৈরি, তার স্বভাব নিম্নমূখী। আজাজিল বললেন,মানব শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। আপনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর করে সত্য , কিন্তু তারা কৃতজ্ঞতাভাজন হবে না,তারা নাফরমান হিসেবে পরিচিত হবে।
স্রষ্টা তার আদেশ অবমাননার শাস্তি হিসেবে আজাজিলকে ফেরেশতার দল থেকে বহিষ্কার করলেন। তার নাম দিলেন,শয়তান।
স্রষ্টার কাছে শয়তান মানুষকে নাফরমান করার অলৌকিক ক্ষমতা আর নিরবে মানবের আত্মা ও শরীরকে বেপথু করার ক্ষমতা চেয়ে নিল।
স্রষ্টার একদিন ইচ্ছা হলো,জ্বিন নারীর মতো মানব নারীও সৃষ্টি করবেন। এবার বললেন, কুন-ফাইয়াকুন। অমনি আদমের বাম পাঁজর ভেদ করে বের হয়ে এলেন ইভ, আমাদের আদি মাতা। তাঁরও শৈশব নেই। তিনিও সুগঠিত উপযুক্ত নারী তখন।
প্রথম নর-নারী স্বর্গোদ্যানে হেঁটে বেড়ান,ঘুরে বেড়ান। ঈশ্বর তাদের মধ্যে কাম-কলার আবেগ দিলেন না,তাদের জীবন অনুভূতিহীন চলমান পুতুলের মতো। স্রষ্টা নতুন ভাবনা ভাবলেন। একটা জটিল গল্প বানালেন।
একটা আপেল গাছ দেখিয়ে বললেন, তোমাদের জন্য এই উদ্যানের সর্বত্র যাওয়ার ও ফল খাওয়ার অধিকার আছে, এই ফলের নাম গন্ধম,কেবল এই ফল খাবে না।
স্রষ্টা তাঁর গল্প থেকে নাটক বানানোর কাজে হাত দিলেন। স্রষ্টার নাটক বলে কথা, তার ক্লাইমেক্স থাকে সুপার-ডুপার। স্বর্গে যখন নাটকের মহড়া চলছে,স্রষ্টা তখন দুনিয়া সৃষ্টির কাজেও হাত দিলেন।
শয়তানও তার প্রথম দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য মঞ্চে প্রবেশ করে। শয়তান সুন্দর একটা সাপ সেজে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রথম মানবীর সঙ্গে। তার দিগম্বর শরীরের প্রশংসা করে তার স্হুল বুদ্ধিকে উসকে দেয়। তাদেরকে সুন্দর সুস্বাদু ফল ভক্ষণ থেকে বঞ্চিত করার জন্য স্রষ্টার সমালোচনা করে। শয়তান বলল, গন্ধম হলো স্বর্গোদ্যানের সবচেয়ে মিষ্টি ফল।
ইভ আদমকে প্ররোচিত করেন। যেহেতু তখন পর্যন্ত স্রষ্টা তাদের মধ্যে বুদ্ধিসুদ্ধি সন্নিবেশ করেন নি, স্রষ্টার নিষেধের পরিণতি সম্পর্কেও তাঁরা অজ্ঞ,তা-ই দৃষ্টিনন্দন সুস্বাদু লাল আপেল তাঁরা ভক্ষণ করলেন।
তখন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। তাঁদের মধ্যে লজ্জার আবেগ সৃষ্টি হলো। পরম বিস্ময়ে তাঁরা পরষ্পর পরষ্পরকে দেখলেন। তাঁদের মধ্যে প্রেমানুভূতি সৃষ্টি হলো, কামভাব সৃষ্টি হলো। সেই থেকে মানবের প্রথম আবেগ-অনুভূতি হলো লজ্জা, প্রেম ও কাম। মানব ও শয়তান পাশাপাশি বহু সহস্র শতাব্দী পার হয়ে এসেছে। কিন্তু প্রথম সেই অাবেগ-অনুভূতির প্রাবল্য কোনোদিন একটুও কমেনি,বরং তা স্ফুটোন্মুখ কুঁড়ির মেলে দেওয়া পাপড়ির মতো রঙিন ও সুশোভিত হয়েছে আর শয়তান তার সুযোগ নিয়েছে।
আমাদের শৈশব-কৈশোর তো আর আদি পিতা-আদি মাতার মতো শৈশবহীন নয়,আমরা স্রষ্টার সরাসরি নিজহাতে সৃজন করাও নই, আমরা হলাম কুন-ফাইয়াকুন কুলজাত৷ সে কারণে আমাদের শৈশব-কৈশোরের গল্পে কিছু কিছু লজ্জা আর প্রেমাবেগের কথা থাকে। আমরা আমাদের ফেলে আসা গল্পেও কিছু কিছু লজ্জা আর প্রেমের গল্প রেখে এসেছি, যদিও সেখানে কামকলার কথা নেই।
ফেরেশতার রঙিন ডানার কথা বলতে গিয়ে এত কথা বলতে হলো। আমাদেরও ডানার বিস্তার ঘটছে, যেন ডানায় ভর করে একে একে পার হয়ে এলাম বন্দর বাজার, সুবহানিঘাট,মীরাবাজার, টিলাগড় তারপর এমসি কলেজের উন্মুক্ত সবুজ প্রাঙ্গণ। এখান থেকেই শুরু হবে জীবনের নতুন গল্পের উদ্বোধন।
যে গল্পগুলো পেছনে ফেলে এলাম,সেগুলো আমাদের একস্কুল ছেলেমেয়ের প্রায় একই। সবক্ষেত্রেই কিছুটা ব্যতিক্রম তো থাকেই, আমাদেরও কারো কারো ক্ষেত্রে সে ব্যতিক্রম ছিল। আমার ক্ষেত্রেও ছিল। সময়ের ট্র্যাক ধরে ছুটতে ছুটতে প্রসঙ্গক্রমে সে গল্পের কখনো অবতারণা করা যাবে। তবে একটা গল্পের শুরু হয়েছিল সত্তরের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়কে ঘিরে। আমি তাকে বলি, সে ছিল এক সুনামি,বাংলাদেশে এর আগে-পরে আর কখনো এমন সুনামি আর আসেনি। বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলভাগ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সেই জলোচ্ছ্বাসে, বারো লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, পাঁচ লক্ষ গবাদি পশু মারা যায়, মানুষের ঘরবাড়ি উপড়ে ভেসে যায় সমুদ্রে। যারা বেঁচেছিল তারাও কেউ কেউ বেঁচেছিল অলৌকিক আশীর্বাদে, যে কখনো নারিকেল গাছে চড়তে জানে না,সে উঠেছে ডিগীতে, যে বৃদ্ধ অশীতিপর তিনি উঠেছেন সুউচ্চ মগডালে,সারারাতের তাণ্ডবের কথা তিনি বলতে পারেন না, ভেসে যাওয়া ছনের চালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে পাশাপাশি দূর সমুদ্রতক ভেসে গেছে ছোট্ট শিশু আর বিষাক্ত গোখরো, স্রোতের টানে এক অঞ্চলের মানুষ ভেসে গেছে আরেক অঞ্চলে। খেজুর গাছের কাঁটাঝোপে কাঁটা বিদ্ধ আটকে থেকেও বেঁচে গেছে কেউ কেউ, সে এক দুঃসহ বেঁচে থাকা,তবু তো বেঁচে গেছে ফসল ফলানোর যোদ্ধাটি,কারো মৃত শরীর ঝুলে আছে ঝড়ের তোড়ে ভেঙে যাওয়া বৃক্ষডালের ফলায়, কারো বাড়ির ভিটায় পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন কয়েকটা পাতাশুন্য গাছ ও গুল্ম,কোথায় হারিয়ে গেল একবাড়ি মানুষ! সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে ঘরগুলোকে আলোকিত করেছিল যে কিশোরী আগের দিনের সন্ধ্যায়, পরদিন তার বেআবরু শরীরটা চিৎ হয়ে ভাসতে দেখা যায় দূরের কোনো মোহনায়। একটানা স্রোতের টানে পড়েনি এমন অনেক ভাগ্য বিড়ম্বিত মৃত নরনারীর শরীর ভাসে নদীর কুলে,তাদের সঙ্গে ভাসে তাদের গৃহপালিত পশু। পুরুষের শরীর ভাসে উপুড় হয়ে আর নারীর চিৎ হয়ে। হায়! যে নারী অথবা যে লাজুক বউটি কখনো পর-পুরুষের সামনে ঘোমটা উন্মোচন করেনি, আজ তার লজ্জা ঢাকার কেউ নেই। বিশাল সুন্দর সবুজ সুন্দরবন দুমড়েমুচড়ে যায়, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের থেতলানো শরীর পড়ে থাকে জল নেমে যাওয়া বাদাবনে। তখন ছিল ফসল ওঠার মৌসুম, কৃষকের ধানের গোলা ভরে উঠছিল,মাঠজুড়ে হৈমন্তী ধানের উৎসব। কিন্তু ভেসে গেল সব।একরাতের মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন জলের আগুনে পুড়ে শোকস্তদ্ধ হয়ে আলুথালু পড়ে আছে।
সেই ঘুর্ণিঝড়,সেই গরকি- সে ছিল সেই শতাব্দীর ভয়াবহতম ঘটনা,কিন্তু তখন মিডিয়া অতোটা সচল ছিল না,সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না জোরদার। সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষের এই দুর্দশার কথা রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছায় একদিন পর। সংবাদ কর্মীরা ছুটে যায় দখিন বাংলার নানা উপকূলে। তাদের পাঠানো সংবাদ, ছবির নেগেটিভ রোল পৌঁছাতে সময় লাগে দুই দিন। তার পরদিন রাজধানীর মানুষ জানতে পারে এই মহা প্রলয়ের কথা।দূর মফস্বল অথবা জেলা শহরগুলোয় সংবাদ পৌঁছে একদিন-দুইদিন-তিনদিন পর।
ততদিনে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছিল বাংলার নয়নমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে। পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি একচোখা নীতি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক শোষন, অবকাঠামো উন্নয়নে বঞ্চনা, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বৈষম্য, সরকারি চাকরি, সামরিক বাহিনীতে নিয়োগে আকাশ-পাতাল ব্যবধান -ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছিল। বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে ছেষট্টি সালে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু সামরিক শাসক আইউব খান শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করেন। তিনিসহ পঁয়ত্রিশ জন বাঙালি সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ এনে মামলা দাযের করে, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে প্রচার পায়। বাঙালিরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। আইউব বিরোধী আন্দোলনের এই ঢেউ পশ্চিম পাকিস্তানেও আছড়ে পড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত ফিল্ড মার্শাল আইউব খান ২২ মার্চ ১৯৬৯ তারিখে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করেন ও শেখ মুজিবসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দেন। পরদিন রেসকোর্সের বিশাল সংবর্ধনা সভায় ছাত্রসমাজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভুষিত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহমেদ। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব খান সেনাপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ২৫ মার্চ ১৯৬৯। ইয়াহিয়া খান জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ‘এক ব্যক্তির এক ভোট’ ভিত্তিতে পাকিস্তানে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। বাঙালিরা বুঝল, এই সুযোগ। তাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা। হয় ৬ দফা, না হলে ১ দফা। ১ দফা মানে স্বাধীনতা। নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে,ওটাই বাঙালির মুক্তির মার্কা।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় ৫ অক্টোবর। কিন্তু সেপ্টেম্বরে প্রবল বন্যায় দেশ ভাসল। নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হলো। ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ আর ১৭ ডিসেম্বর করা হলো প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন।
নির্বাচনী ডামাডোলে সারাদেশ উত্তাল হয়ে থাকে। বাঙালির চোখে স্বপ্ন,এবারের নির্বাচনে তাদের জিততে হবে,ক্ষমতায় যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু সারা পূর্ব বাংলা ছুটে বেড়াচ্ছেন আর তাঁকে অনুসরণ করে যেন সারা দেশে নৌকার উৎসব লেগেছে।
এমন যখন অবস্থা, তখন একদিন, সেদিন ১২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব বাংলার সমুদ্র উপকূলে হানা দেয় শতাব্দীর ভয়াবহতম ঘুর্ণিঝড়।
সংবাদ প্রাপ্তিতে বিলম্ব আর অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কিছুটা দেরী হলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সাহায্য সহযেগিতা নিয়ে উপদ্রুত উপকূলে ছুটে যায়। ততদিনে মৃত মানুষ আর জীব-জন্তুর পঁচা লাশের গন্ধে ভারী বাতাস, বেঁচে থাকা বিপন্ন অভূক্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সারাদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণার কাজ বন্ধ করে ছুটে যান সর্বহারা মানুষের পাশে।
কিন্তু সেদিনের সেই দুঃসময়ে পাকিস্তান থেকে কেউ এলো না একটু সমবেদনা জানানোর জন্য। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চীনে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে রাওয়ালপিন্ডি ফিরে যাওয়ার পথে ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেন। তিনি হেলিকপ্টার চড়ে ভোলায় গেলেন। উপস্থিত লোকদের বললেন,ধান যেহেতু ভেসে গেছে আপনারা আটা খাওয়া শুরু করেন।
পাকিস্তানি নেতাদের এই বৈমাত্রেয় আচরণকে বাঙালিরা সহজভাবে নিল না। তার প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। দুর্যোগ কবলিত ২২ টি সংসদীয় এলাকার নির্বাচন পিছিয়ে করা হলো পরের মাসে অর্থাৎ ৭১ সালের ২৪ জানুয়ারি। ১৭ ডিসেম্বর আর ২৪ জানুয়ারির ফলাফল হলো পূর্ব পাকিস্তানে নৌকা মার্কা অর্থাৎ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে বিজয় লাভ করে। জাতীয় পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করায় পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতার বসার যোগ্যতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন নিয়ে কথা বলার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। এটা এসেছে ঘটনা পরম্পরায়। আমি আসলে ভয়াবহ সেই জলোচ্ছ্বাসের কথাই বলতে চেয়েছিলাম। এই জলোচ্ছ্বাস আমি চোখে দেখিনি, এর ভয়াবহ তাণ্ডবের শিকার হইনি, এই ঘটনার অন্তত বারোদিন পর জলোচ্ছ্বাস বিধ্বস্ত স্বগ্রামে গিয়ে যে শ্বাসরুদ্ধকর চিত্র দেখেছি, সেই বেদনা,সেই আবেগে আমি আমার জীবনের প্রথম কবিতাটি লিখেছিলাম। সেই ব্যথার বিস্ফোরণই কী আমার কিছুটা লেখক হয়ে ওঠার সূত্রপাত! আমি এখন জীবনের পরিণত সময়ের আঙিনায় ‘কিছুটা লেখক কিছুটা না-লেখক’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। যে-টুকু লেখক হয়েছি না-হয় সে-ই গল্পটাই শুরু করা যাক।
Leave a Reply