ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ইরানের ওপর থেকে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং অ্যাফেয়ার্সের আন্ডার সেক্রেটারি রোজমেরি ডি কার্লো নিরাপত্তা পরিষদে এক বক্তব্যে এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছি পরিকল্পনা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা স্থগিত করার এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তেল বাণিজ্যের সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞায় বিলম্বের সীমা বাড়ানোর।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু বেসামরিক পরমাণু কর্মকাণ্ডের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিলম্ব আদেশের সময় বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।’
এর মাধ্যমে ইরানের ভেতর থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামের বদলে বের করে আনা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাঁচ মাস বিরতির পর গত ২৯ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি বহালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি আলোচনা শুরু করে। টানা পাঁচদিন আলোচনার পর কোনো সমাধান ছাড়াই স্থগিত হয় সপ্তম দফার এই আলোচনা।
আলোচনায় অগ্রগতির মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ইরানের খসড়া প্রস্তাবনা পেশ উল্লেখযোগ্য।
৯ ডিসেম্বর থেকে অষ্টম দফায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইরানের সাথে বিশ্বশক্তির পরমাণু সমঝোতায় শুরু হওয়া আলোচনা ছয় দফা বৈঠকের পর জুনে ইরানে নির্বাচনের কারণে স্থগিত করা হয়।
পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছে।
১৯৭০ এর দশকে রাজতান্ত্রিক শাসনে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রথম পরমাণু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রকল্প থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালেও ইরান প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি ইরানের পরমাণু প্রকল্পের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টার জন্য দেশটিকে অভিযুক্ত করে আসছিলো। ইরানকে ‘পরমাণু অস্ত্র অর্জনে বাধা দিতে’ দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
ইরান সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তেহরানের দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ।
ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতায় বিভিন্ন সময়ই বিশ্বশক্তির আলোচনা হয়।
২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভিয়েনায় ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা সংক্ষেপে জেসিপিওএ নামে পরিচিত এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এর বিনিময়ে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়।
তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সীমিত পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তিনি জানিয়েছেন, ইরানকে আগে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে। অপরদিকে ইরান আগে দেশটির ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় নতুন করে শুরু হওয়া পরমাণু আলোচনায় তেহরান ওয়াশিংটনের কোনো প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে অস্বীকার করেছে।
সূত্র : প্রেস টিভি
Leave a Reply