জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ (৮ম পর্ব):সিরাজুল ইসলাম মুনির
আপডেট সময়:
শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২
৬৫
দেখেছেন
এবার অনেকেই এসেছে। হবিগঞ্জ থেকে সালেহ, ঢাকা থেকে এমদাদ, মাইজদী থেকে আকরাম, সিলেটের আমরা সবাই, দলটা বেশ বড় এবার। প্রতিদিনের আড্ডা এবার দূরের পাহাড় খাসিয়াপুঞ্জি, মনিপুর টি এস্টেট, ইন্দানগর চা বাগান। চা বাগানের পাগলকরা সবুজ নিসর্গ, খাসিয়াপঞ্জির ভিন্নরকম জীবনধারা আমাকে আকর্ষণ করে। খাসিয়াদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। আমাদের ছেলেরা মেয়েদের বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু খাসিয়া সমাজে ছেলেরা মেয়ের বাড়িতে চলে যায়। সম্পত্তির মালিকও থাকে মেয়েরা। ওরা গ্রামকে বলে পুঞ্জি।পুঞ্জিপ্রধানকে বলে মন্ত্রী। মন্ত্রীর নির্দেশ সবাই মান্য করে।
‘ছোটবেলা থেকে আমরা একটা ছড়া কাটতাম। ছড়াটা এরকম-
গুয়া গাছে পান,পানের মাঝে চুন
আল্লাহ মিয়ার গুণ।’
এটার বাস্তবরূপ দেখলাম পুঞ্জিতে বেড়াতে গিয়ে। সুপারি (গুয়া) গাছ বেয়ে ওঠে খাসিয়া পান। পান পাতার উপর কখনো কাক চুনের মতো সাদা বিষ্টা ত্যাগ করে। সে-ই থেকেই হয়তো এই ছড়ার যাত্রা। যা-ই হোক, খাসিয়া পান খুব ঝাঁঝালো,আমরা যারা শখের বসে খাই, আমাদের মুখ পুড়ে যায়,অথচ ওরা খুব আনন্দের সঙ্গেই খায়।
বনবাদাড়ে ঘুরতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। কিন্তু এবার আর ভালো লাগে না। কিন্তু আমার ভালো না লাগার কথা কাউকে বলতে পারি না।
একদিন আমি সালেহকে নিয়ে দলছুট হলাম। সালেহকে বললাম, চল্ চুনু ভাইয়ের বাড়ি যাব। চুনু ভাই ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। চুনুভাই কী চাকরি করতো জানি না। তবে খুব বড় কোনো পোস্টে তো নয়ই। তার লম্বা বাবরি চুল,গলায় ঝোলে মোটা চেইন, কোমরের মোটা বেল্টেও ঝোলে চেইন, চাবির রিং। চুনু ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের মেলামেশা দেখে কেউ কেউ আমাদের গার্ডিয়ানের কাছেও অভিযোগ করেছিল। আমরা তার সম্পর্কে সাফাই গাইতাম। আসলে আমাদের কাছে চুনু ভাই ছিলেন একজন ভালো আত্মার মানুষ। আরো অনেক পরে শুনেছিলাম, চুনু ভাই খাসিয়পঞ্জির এক সুুন্দরী কিশোরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।
চুনু ভাইয়ের বাসা আছে জাপানি টিলায়। কিন্তু বাড়ি থেকে অফিস করতেন,মাঝে মধ্যে জাপানি টিলার বাসায় থাকতেন। জাপানি টিলা খুব সুন্দর। মাঝখানে বড় মাঠ রেখে চারদিকে লালটিনের ব্যারাক। জাপানি টেকনিশিয়ানরাই মূলত এই এক কামরার বাসাগুলোয় থাকতেন। তারা চলে গেলে ব্যাচেলর জুনিয়র কর্মকর্তারা এই বাসাগুলো বরাদ্দ পান।
আমাদের স্কুলের নিয়ম ছিলো ফার্স্ট বয় হবে ক্লাস ক্যাপ্টেন। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার সিট বরাদ্দ ছিল সামনের বেঞ্চে। কিন্তু আমার সম্পর্ক ছিল ব্যাক-বেঞ্চারদের সঙ্গে। ক্লাসের দুষ্টু ছেলেগুলো আমার বন্ধু। চুনুভাইও আমরা দুষ্টু ছেলেগুলোর বন্ধু। চুনু ভাইয়ের বাসায় আমরা মুক্ত-স্বাধীন। ওখানে বসেই আমাদের সিগারেট খাওয়া শেখা হয়ে গেছে। না না, খুব বেশি না, এক- আধটা। বাসায় ফেরার আগে আমরা চকলেট খেয়ে নিতাম। বাসায় এসে প্রথমেই বাথরুমে ঢুকে সাবান পানি দিয়ে কুলকুচা করে ভদ্রছেলের মতো পড়ার টেবিলে গিয়ে বসতাম।
ক্লাস টেনের বছর সালেহ চৌধুরী ধরা পড়ল। সালেহ থাকে তার বোনের বাসায়। হাসান-খালেদ তার ছোট ছোট ভাগনে। খবরটা তারাই পাচার করে দেয় তাদের বাবার কাছে। দুলাভাই এক প্যাকেট সিগারেট পাঠিয়ে দিলেন তার কাছে। লজ্জায় মরে যায় আর কী! হায়! একইরকম মৃত্যুর ঘটনা তো আমারও ঘটল! টেস্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় একদিন দুপুরবেলা। আমি আমার ঘরে পড়ছি। দরজার সিটকিনি লাগানো। আমার ঘরে সাধারণত কেউ আসে না। আমি পড়ছি আর সালেহর থেকে চেয়ে আনা সিগারেটে টান দিচ্ছি।
এমন সময় দরজায় টোকা। আমি দ্রুত সিগারেটটা ড্রয়ারে চালান করে দিলাম। দরজা খুললাম। একসঙ্গেই ঘরে ঢুকলেন কাকু-কাকীমা। হাতে একটা ছোট খাতা। কলম চাইলেন। হয়তো জরুরি কোনো হিসাব লেখার দরকার ছিল।
আমি টেবিলের উপর গুছিয়ে রাখা বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে কলম খুঁজি। কলম পাই না। কাকীমা বললেন, ড্রয়ারে দ্যাখ,বলতে বলতে তিনি নিজেই ড্রয়ার টান দিলেন। অমনি আলাদিনের দৈত্যের মতো ধোঁয়া উঠতে শুরু করল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে। আমি নিঃসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।মনে হলো একবার আকাশটা গর্জে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গেই যেন গর্জনের উৎসটা দূরে সরে গেল। কাকীমা হাতের টানে তাঁকে নিয়ে গেলেন দরজার বাইরে।
চুনু ভাইয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা বলা ছিল আসলে আমার বাহানা। তার বাড়ি যাওয়ার পথ পিপিএম স্কুলের সামনে দিয়ে। আমার মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছা জেগে ওঠে। একবার স্কুলে যাব,দেখি তার কোনো আতা-পাতা খুঁজে পাই কী না! আমার ভেতর কোথা থেকে এমন সাহস নাকি দুঃসাহস এলো জানি না। পরে অবসরে কখনো যখন কথাটা মনে হয়েছে, আমি অবাক হয়ে গেছি,আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠেছে।
মেইন রাস্তা থেকে পিপিএম স্কুলের প্রবেশ পথটায় রেললাইন বসানো।রেললাইনটা মাইজগাঁও থেকে কারখানার ইউরিয়া গোডাউন পর্যন্ত বিস্তৃত। একটা ছোটো ইঞ্জিন সারভর্তি বগীগুলো মাইজগাঁও স্টেশনে নিয়মিত পৌঁছে দেয়। বগীগুলো জোড়া লেগে লেগে যখন বিশাল হয়, তখন বড় ইঞ্জিন টেনে নিয়ে যায় দূরের কোনো ঠিকানায়।
রেললাইন পার হয়ে গেলেই স্কুলের খোলা মাঠ। মাঠের উত্তর ও পশ্চিম দিক ঘিরে এল-সেপড টিন-ছাউনির স্কুল। স্কুলের চওড়া বারান্দা আছে। তখন লেজার আওয়ারের ঘন্টা পড়েছে। একটা চঞ্চলতা স্কুলের বারান্দায়। টিচারদের পিছু পিছু মেয়েরা দলবেঁধে ছুটছে। তাদের উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই মেয়েদের কমন রুম। এইসব দেখতে দেখতেই আমরা পার হয়ে এলাম স্কুলের মাঠ।
সালেহ বলল,কই যাস?
বললাম,ফলো কর্।
সালেহ কথা বলে না,আমার উদ্দেশ্যও বুঝতে পারছে না।
আমরা বারান্দা ধরে হাঁটছি। তার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেল। সেই নম্র চোখ মেলে সে তাকাল,
এবার মুখে তার স্নিগ্ধ হাসির রেখা। তার হাঁটার গতি শ্লথ হলো,একটু পিছিয়ে পড়ল অন্যদের থেকে,তাতে সুবিধে হলো এই, এক মুহূর্তের জন্য আমরা কাছাকাছি হলাম। অবিস্মরণীয় সে মুহূর্ত, এই ভরা দুপুরেও আমার সামনে ‘নীল জোছনার আলো’ ছড়িয়ে পড়ে। সে বলল, আজ বিকেল পাঁচটায় ব্রিজটায় থাকবেন।
সে দ্রুত পায়ে মিশে গেল তার দলের সঙ্গে। কিন্তু আমি ধরা পড়ে গেলাম। আমরা যে আগন্তুক, স্কুলের সবার থেকে আমাদের পোশাক-আশাক আলাদা,আমাদের পরিচয় জানতে চাওয়া সংশ্লিষ্ট যে কোনো কারো পক্ষেই স্বাভাবিক।
একজন শিক্ষক, তিনি ক্লাস থেকেই ফিরছেন, পথ আগলে দাঁড়ালেন, আপনারা?
সালেহর দিকে তাকালাম, তার মুখটা চুপসে গেছে। কিন্তু আমি স্মার্টলি বললাম, হেডমাস্টার স্যারের রুমটা খুঁজছি।
কেন? কী দরকার?
আমি সাংবাদিক, শুনেছি আপনাদের স্কুলে কিছু সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটা রিপোর্ট লিখতে চাই।
এক ডায়লগেই কাত ভদ্রলোক। বললেন, কোন্ পত্রিকা?
গণকণ্ঠ।
ওহ্। গণকণ্ঠের তো অনেক সার্কুলেশন। হাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন, এখানে শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন পান না। বেতনও খুব কম। অথচ দেখেন,ওই যে বিআইডিসি স্কুল, ওখানকার টিচাররা আমাদের থেকে চার-পাঁচ গুণ বেশি বেতন পান।
এরইমধ্যে আরো দুজন শিক্ষক সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমার চোখ তখন পেছনে মেয়েদের জটলায়, বোঝাই যায়, ওটাই ওদের কমনরুম। আমার অনুমান মিথ্যে হয় না। দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে,অপলক তার দৃষ্টি আমার দিকেই। নিশ্চিতই সে ভয় পেয়েছে, তার মুখের মিষ্টি হাসিটি নেই। অভয় দেওয়ার জন্য আমি হাসলাম কথা বলতে বলতে। তারপর ওদের কমনরুমের সামনে দিয়ে তিনজন শিক্ষকের প্রটোকলে আমরা চললাম, হেডমাস্টার স্যারের রুমের দিকে।
না,আমার পকেটে সাংবাদিকের আইডি কার্ড নেই, কার্ড যে থাকতে হয় সেটাও জানি না, পকেটে কলম নেই, কাগজ নেই। নিধিরাম সর্দারের মতো ঢাল-তলোয়ার বিহীন সাংবাদিক, বুঝে ফেলতে পারলে তো আমার খবর হয়ে যেতো। বুঝতে সময় দেইনি তাদের, আগেই চেয়ে বসলাম কাগজ-কলম। আমি আজ স্কুলের উদ্দেশে আসিনি, এপথে যাচ্ছিলাম বন্ধুর বাড়ি, রিপোর্টটা নিব বলে ঢুকে পড়লাম।
দুধে ময়লা পড়তে পারে, আমার কথায় মলিনতা থাকে না। তাদের সমস্যা মূলতঃ একটা, বেতন কম,অনিয়মিত হয় প্রায়ই। ছাত্র-বেতনই তাদের মূল আয়, সরকারি ভাতা তাদের নেই। আমি তার সঙ্গে যোগ করলাম বাউন্ডারি দেওয়াল, রেলগেট,খাবার পানির জন্য টিউবওয়েল, কক্ষ সংকট,টিচার্স কোয়ার্টার ইত্যাদি। তাঁরা আমাকে সময় দিলেন। চা-বিস্কুট খাওয়ালেন। তারপর একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে আমাকে স্কুলের বারান্দা ধরে নিয়ে চললেন। শেষ মাথায় ক্লাস টেন। হাঁ, এখানেই সে আছে,তাকে আমি দেখতে পেলাম। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম,সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই, নতুন বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে কথা বললাম, বাউন্ডারি দেওয়ালের জন্য স্কুলের সীমানা কোন্ পর্যন্ত জানতে চাইলাম।
এভাবেই আমার স্কুল-মিশন শেষ হলো। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে বিদায় দিতে মাঠে নেমে এলেন। আমি নিশ্চিত, চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত দুটো চোখ আমাকে অনুসরণ করছিল।
মাঠ পেরুবার সময় চোখে পড়ল মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দুটো গরু মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছে। এর মানে এটা অরক্ষিত। স্কুল ছুটির পরে অথবা ছুটির দিন এটা পশুচারণক্ষেত্র হয়ে যায়।
রেললাইন পার হতে গিয়ে আমার মনে হলো সত্যিই এখানে একটা রেল গেটের জরুরি প্রয়োজন। যে কোনোদিন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এবং এরকমটা যদি কখনো ঘটে, সেদিন হয়তো ঠিকই রেলগেটের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। একজন রেলগার্ড লাল পতাকা- সবুজ পতাকা হাতে এখানে ডিউটি করবেন।
রাস্তায় উঠে আমি চুনু ভাইয়ের বাড়ির পথ নয়, আমাদের বিআইডিসি-র পথে হাঁটলাম। বন্ধুকে বললাম, এটা যাওয়ার সময় নারে! ক্ষুধা লাগছে। চল, বাসায় যাই।
সালেহ মেয়েটাকে আমার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে, কিন্তু কী কথা হয়েছে, শুনতে পায়নি। কিন্তু তার কৌতুহল তো রয়ে গেছে। বলল, তর লগে যে মাতল,ফুড়ি অওগু কে?
বললাম, চিনি না। বলল, ভাইয়া, ভালো আছেন?
তে তুই কিতা খইছস?
মুখে কুন্তা খইছি না। ইশারায় খইছি,বালা আছি।
তাই(সে) সুন্দর আছে। জিগাইতে আছলে,বাসা খই।
প্রেম খরবে না কিতা?
দূর!ইতা আমারে দিয়া অইতো নায়।
তে খইলে যে ফুড়ি সুন্দর আছে!
সুন্দর তো! কথা তো আর মিছা নায়। আইচ্ছা বাদ দে, খ’ছাই (বলতো), তুই সাংবাদিক
অইলে কবে?
আমি আবারও সত্য গোপন করি। এইতো একমাস হলো।
মিথ্যা বলতে আমার খারাপ লাগছে, অন্তত বেস্টফ্রেন্ডের কাছে। একদিন নিশ্চয়ই সব কথা বলব, কিন্তু আজ সেটা বলার সময় আসেনি।
চুনু ভাইয়ের বাড়ি যাবার নাম করে স্কুলে যাওয়া। হঠাৎই দুষ্ট বুদ্ধিটা মাথায় চাপল। বুদ্ধিটা অবশ্য দারুণই হয়েছে। পাঁচ মাস পর রজকিনী কথা বলল। কিন্তু অবাক হয়ে গেছি এই ভেবে যে সে জানল কী করে,আমার সারা অন্তুরজুড়ে কেবলই সে আছে! তাহলে সে-ও কী সেই প্রথম দেখার দিন থেকে আমারই অপেক্ষায় ছিলো? তাহলে কি সেই গানের কথাই সত্যি হলো, ‘চোখ যে মনের কথা বলে/ চোখে চোখ রাখা শুধু নয়/ চোখের সে ভাষা বুঝতে হলে/ মনের মতো মন থাকা চাই।’
বুদ্ধির খেলায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরাস্ত করে সসম্মানে সেখান থেকে তো বের হয়ে এলাম, কিন্তু নিজের বিবেককে কী জবাব দেব? একটা পত্রিকার নাম ভাঙালাম, অথচ ওদের সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পর্ক নাই। আমাদের হোস্টেলে ইংলিশ অনার্সের ফারুক ভাই গণকন্ঠ পত্রিকাটা রাখেন। তাঁর পড়া হয়ে গেলে আমি পড়ি। নিয়মিতই পড়ি। পড়তে আমার বেশ লাগে। সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়ে না। আমার অবশ্য ভালো লাগে আরেকটা কারণে, সেটা হলো পত্রিকায় রব ভাইয়ার খবর ছাপে, তাঁর সুন্দর সুন্দর ছবি ছাপা হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, গত ৩১ শে অক্টোবর (১৯৭২)ছাত্রলীগের রব গ্রপ অংশ ‘আমাদের লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ এই স্লোগান নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’ গঠন করে। গণকন্ঠ জাসদের মুখপত্র।
রব ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর থেকে সবাই মনে করতে থাকে আমি বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগ করি। আমি আসলে কোনো দল করি না। না বৈজ্ঞানিক, না মুজিববাদ। সব দলের নেতাদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক,হয়তো আ স ম রবের ভাই বলে তারাই আমাকে বিশেষ কদর করে। আমার দল করা বা না-করা নিয়ে আমি গণকন্ঠ পড়িনা,পড়ি পড়তে ভালো লাগে বলে। নুরুল হক মনজু ‘বাংলার বাণী’ রাখেন। বাংলার বাণীর সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাগনে। এই পত্রিকাটার গেটআপ সুন্দর,ঝকঝকে ছাপা। সব সময় সরকারের পক্ষে সংবাদ ছাপে। ইত্তেফাক অনেকেই রাখে, এই পত্রিকাটা বাহুল্য কোনো কথা বলে না।খুব অল্প কথায় যে কোনো সংবাদকে এমনভাবে ছাপে, একবার পড়লেই বুঝা হয়ে যায়।
আমার সেদিনের রাত গেছে তার কথা ভেবে ভেবে। পরদিন আবার আমাদের ফেরার দিন। (ক্রমশ:)
Leave a Reply