বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এদেশ মধ্যম আয়ের কৃষি নির্ভর একটি দেশ। এদেশের মানুষের জীবন জীবিকার সাথে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে এদেশের মোট জিডিপির ১৩.৬% আসে কৃষি থেকে। একটু পেছনে ফিরলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত সত্তর-আশির দশকে যেখানে সাত কোটি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয়াই ছিল দুরূহ কাজ, সেখানে আজ এই একুশ শতকে অনাহারে আছে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কখনো কি আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে বা আমরা কি কখনো ভেবেছি যেখানে সাত কোটি মানুষ প্রতিদিন দুমুঠো খাবারের চিন্তা করত সেখানে কিভাবে আজ এতগুলো মানুষের মুখে খাবার উঠছে? এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এদেশের কৃষিবিদদের। এদেশের বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে জানে না বা জানতে অনীহা। আর ইঞ্জিনিয়ার আর ডাক্তারের যুগে এই কৃষিবিদরা দেশে নীরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে কেন শিক্ষার্থীদের অনীহা তা আমার বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের জেনেটিক্স এন্ড ফিশ ব্রিডিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন ” বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কৃষির সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার মূল অন্তরায় হল অন্যান্য পেশাগুলোকে গুরুত্ব বেশি দেয়া।” তিনি আরও বলেন “খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য সুরক্ষার জন্য কৃষি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ অধিক জনসংখ্যা এবং খাদ্যে ভেজাল আমাদের দেশের অন্যতম বড় সমস্যা।”
এখন আসা যাক এই কৃষিবিদ কারা?
কৃষিবিদ বলতে মূলত কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় গুলোর স্নাতকদেরকেই বুঝানো হয়। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি কৃষিবিদদের ও প্রথম শ্রেনির মর্যাদা প্রদান করেছেন স্বয়ং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কিভাবে আসতে হবে?
মূলত এইচ এস সি পাশ করার পর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে স্বীকৃত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলঃ
১. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
২. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
৩. শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
৪. সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
৫. চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়,
৬. খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এসব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ক বিষয়ে অনার্স করানো হয়ে থাকে।
কৃষির ভবিষ্যৎঃ
কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, ক্যাডারের অাওতায় কৃষি স্নাতকদের জন্য সিভিল সার্ভিসে স্বতন্ত্র ক্যাডারের সুযোগ ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি এই তালিকায় সংযোজিত হয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি অর্থনীতি/ সমমানের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠিত সাবজেক্ট। টেকনিক্যাল ক্যাডারের আওতাভুক্ত হওয়ার কারনে নিজের পাঠিত বিষয়ে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। প্রতিটি বিসিএস এ অন্তত ৩০০ টি করে সিট কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়সমুহের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাছাড়া কৃষিবিদ হয়েও জেনারেল ক্যাডারগুলোতে স্বীয় মেধার গুণে নিজেদের দক্ষতার ছাপ রাখছে অামাদের কৃষিবিদরা। তাছাড়াও অনেক গুলো গবেষনা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির অধীনে অসংখ্য কৃষিবিদ বিভিন্ন সরকারী ব্যাংক গুলোতে চাকুরি করছে। কাজেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের জব ফিউচার জেনারেল লাইনের স্টুডেন্টদের তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ।
দেশকে ভালবাসার দায়বদ্ধতা থেকে যারা কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করা উচিত। দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং আগামীর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহে কৃষি ও কৃষিবিদরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Leave a Reply