জহিরুল হক মিলন: বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী সরকারী কলেজ ১৯৭১ সালের স্মৃতি বিজোড়িত বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ। ফেনী জেলা প্রশাসনের সন্মেলন কক্ষে বুধবার
দুপুরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও অতিদ্রুত কাজ শুরু করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল-হাসান সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক,শিক্ষক সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নৃশংস বর্বরতায় ক্ষত-বিক্ষত ফেনী। ফেনী শহরে স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালিরা বিজয়ের নিশান উড়িয়ে উল্লাস করে স্বজন হারানোর কান্না ভুলে গিয়েছিল । স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেনীতে ফেনী অঞ্চলের ৮টি বৈধ্যভূমি অবহেলিত। কোন উদ্যোগ গ্রহণ কর হয়নি সংস্কার করার। মুক্তিযুদ্ধকালীন ফেনী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্বের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম বীর বিক্রম ভারতের বিলোনীয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অভিযান চালান।এসময় বিলোনিয়া, পরশুরাম, মুন্সিরহাট, ফুলগাজী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে এগোতে ফুলগাজী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে এগোতে থাকলে পর্যুদস্ত হয়ে ফেনীর পাকহানাদার বাহিনীর একটি অংশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের রাস্তা ধরে এবং অপর অংশ শুভপুর ব্রিজের ওপর দিয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। অপরদিকে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) ফেনী মহুকুমা কমান্ডার ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবদীনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দাগনভুইয়া, রাজাপুর, সিন্দুরপুর হয়ে শহরের দিকে এগোতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকহানাদাররা ৫ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়। সে সময় ফেনী অবাঙ্গালি মহোকুমার প্রশাসক বেলাল এ. খানও পাকবাহিনীর সঙ্গে চলে যান। ফেনী হানাদার মুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক ও রেল পথে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর মুন্সির হাটের মুক্তারবাড়ী ও বন্ধুয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধ ইতিহাসে সমাদৃত। এ রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধকৌশল বাংলাদেশ, ভারত, ও পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিগুলোতে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা এ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের অহংকার ও গর্বের বিষয়।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফেনী সরকারি কলেজ, তৎকালীন সিও অফিসসহ কয়েককটি স্থানে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার পর জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি বধ্যভূমিতে শহীদদের লাশ শনাক্ত করতে ছুটে বেড়িয়েছিল স্বজনহারারা। মুক্তিযোদ্ধারা জেলায় সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি (বর্তমানে ফেনী কলেজের কলা ভবনের পেছনে) শনাক্ত করলেও আজও তা সংরক্ষণ করা হয়নি। বর্তমানে এখানে প্রতিনিয়ত ফেনী সরকারি কলেজের পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য ফেলা হয়। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, অমর শহীদদের স্মৃতির ভাস্কর হিসেবে শহরের জেল রোডের পাশে বীর শহীদদের নামের তালিকা সম্মিলিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও কয়েক বছরে স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অস্পষ্ট হয়ে মুছে গেছে।
Leave a Reply