‘শিক্ষাক্রম আমূল পরিবর্তন করা যায় না’-এটি শিক্ষাক্রম সম্পর্কিত স্বতঃসিদ্ধ মতবাদ। শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রতিবেদক যথাযথভাবে অবহিত নন বলে প্রতীয়মান। পরবর্তী অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
১। ত্রুটিপূর্ণ শিরোনাম: প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমটি নতুন নয়, এটি পরিমার্জিত।
শিক্ষাক্রম পরিমার্জন প্রক্রিয়ায় অনুসরণীয় প্রক্রিয়া হিসেবে কার্যকারিতা যাচাই, চাহিদা নিরূপণ ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণপূর্বক নির্দিষ্ট সময় পরপর শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনতে হয়; সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক ধাপ অনুসরণ করে খসড়া শিক্ষাক্রম প্রণয়ন/পরিমার্জন করা হয়।
২। ‘পাইলটিং না করে এনসিসিসিতে অনুমোদন’: খসড়া শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পর পাইলটিং এর পূর্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) কর্তৃক অনুমোদন এবং পরবর্তীতে পাইলটিং এর ফলাফল বিশ্লেষণপূর্বক চূড়ান্ত অনুমোদন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন/পরিমার্জন প্রক্রিয়ার একটি পদ্ধতিগত শুদ্ধাচার। ২০১২ সালেও পাইলটিং এর পূর্বে শিক্ষাক্রমের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে পাইলটিং এর ফলাফল পর্যালোচনাপূর্বক শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। এবারেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাইলটিং এর পূর্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) কর্তৃক অনুমোদন করা হয়েছে।
৩।‘যোগ্যতাভিত্তিক শিখন অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের একটি অংশমাত্র’: জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করা হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে সক্রিয় শিখন-শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। সক্রিয় শিখনের আওতায় যোগ্যতার ধরন, শিক্ষার্থীর বয়স ও পরিপক্কতা অনুযায়ী অনুসন্ধানমূলক, সমস্যা-সমাধানমূলক, প্রকল্প ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে। কাজেই, অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন সক্রিয় শিখনের একটি অংশ।
৪।‘অনুসরণ করা হয়নি জাতীয় রূপরেখা’: এ তথ্যটি ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণানির্ভর।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা প্রণয়নে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং যৌথভাবে কাজ শুরু করে; যেখানে অভিন্ন ভিশন, মিশন, দক্ষতা, মুল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি, মূল যোগ্যতা, শিখনক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতা এবং বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। অভিন্ন শিখনক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতা থেকে প্রাথমিকস্তরের জন্য বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত প্রাথমিকস্তরের জন্য যৌথভাবে নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বিস্তৃত শিক্ষাক্রম কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিকস্তরের বিস্তৃত শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। উল্লেখ্য, এসকল কাজে মাধ্যমিক স্তরের সাথে সমন্বয় সাধনের সুবিধার্থে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং এর দুই থেকে তিনজন কর্মকর্তা প্রতিটি কর্মশালায় উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেছেন।
২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা উইং এর সদস্যবৃন্দ দুই স্তরের শিক্ষাক্রমের অবিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেন। প্রাথমিক স্তরের পঞ্চম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা মাধ্যমিক স্তরকে হস্তান্তর করা হলে তদনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ৬ জুন, ২০২১ এ প্রাথমিক স্তরের পঞ্চম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংকে সরবরাহ করা হয়। তদুপরি ১৯-২৩ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কর্মশালাসহ পূর্বের একাধিক কর্মশালায় জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার সাথে সামঞ্জস্যতার বিষয়গুলো অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়। কাজেই, উল্লেখিত বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুসরণ করা হয়নি এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে সমন্বয় রক্ষা করা হয়নি-বিষয়টি সত্য নয়।
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটি প্রণয়নের পূর্বে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং এর কোনো কর্মকর্তার সাথে প্রতিবেদকের এতদসংক্রান্ত কোনো আলোচনা ও তথ্য বিনিময় সম্পন্ন হয়নি বলে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
Leave a Reply