সকলেই নিজের চেহারা সুন্দর করতে চায়। সুন্দর সতেজ আকর্ষণীয় চেহারা সবার কাছেই বেশ কাঙ্ক্ষিত এক বিষয়। নিজেকে সবার মধ্যে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার ইচ্ছা থেকেই মানুষ সৌন্দর্যচর্চা করে। সৌন্দর্যের অন্যতম প্রধান শর্ত উজ্জ্বল-মসৃণ ত্বক। আর সৌন্দর্যচর্চার প্রথম ধাপ হচ্ছে ত্বকের যত্ন নেওয়া। গরমকালের তাপ কেবল শরীরেই না, ত্বকেও প্রভাব ফেলে। গরমের তাপ, দূষণ এবং ময়লা ত্বককে নিস্তেজ, ডিহাইড্রেটেড, ঘামযুক্ত এবং তৈলাক্ত করে তুলতে পারে। তাই মেনে চলতে হবে কিছু স্কিনকেয়ার রুটিন। যা অনুসরণ করলে আপনার ত্বক সতেজ এবং হাইড্রেটেড থাকবে। ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্যে বিউটি সিক্রেটে ভরসা রাখতে পারেন আপনি। দৈনিক স্কিনকেয়ার রুটিনটি সামান্য বদলে নিতে পারেন। ত্বকের জেল্লাও হবে দেখার মতো। দাগছোপ থাকবে না। রূপচর্চা বা ত্বকের পরিচর্যা যদি করতে চান সবসময় জানবেন বাজারি কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্টের থেকে ঘরোয়া টোটকা অনেক উপকারী হয়। কেমিক্যাল থাকার কারণে সেই প্রোডাক্টগুলো আমাদের ত্বকের আরও অনেক বেশি ক্ষতি করে। আমাদের রান্নাঘরেই রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বক ও চুলের জন্য দারুণ উপকারী। আসুন জেনে নিই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াবে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান-
ত্বকের জেল্লায় দুধের সর
মুখের জেল্লা ধরে রাখার জন্যে নানা প্রাকৃতিক উপাদান দুধের সরের উপরেই ভরসা রাখতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের জেল্লা ফেরাতে বেশ কার্যকরী। দুধের মধ্য়ে থাকা একাধিক উপকারী উপাদান ত্বকের নানা সমস্যা মেটাতে পারে। সেই সঙ্গে ত্বকে আর্দ্রতার ঘাটতি হতে দেয় না। তবে, দুধের সর সরসারি ত্বকে ব্যবহার করার পরিবর্তে ফেসপ্যাকে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। উপকার পাবেন।
ত্বকের সমস্যায় চন্দন
সৌন্দর্য চর্চায় চন্দনের গুনাগুণ জগৎ স্বীকৃত। এ ছাড়া এর আছে বহু ঔষধি গুণ। প্রাচীনকালে রূপ চর্চার অন্যতম একটি উপাদান ছিল চন্দন। বিভিন্ন রকম কসমেটিকস ও সুগন্ধীতে চন্দন ব্যবহৃত হয়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় চন্দন বেশ উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। চন্দনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ত্বকের স্বাস্থ্য়ে ঠিক রাখতেও নানা ভাবে সাহায্য করে থাকে।
ময়শ্চারাইজার ব্যবহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম থেকে শীত, সারা বছর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। তাই নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। গরমে জেল বেসড ময়শ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
রোদে ত্বকের প্রয়োজন বিশেষ সুরক্ষা
রোদের ক্ষতিকারক রশ্মি, যেমন – ইউভিএ বা ইউভিবি ত্বকের জন্যে ক্ষতিকারক। সানস্ক্রিন এই ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে। তাই দিনের বেলায় বাড়ির বাইরে বেরনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরাও।
ব্রণের প্রতিকারে রসুনের ব্যবহার
ব্রণের প্রতিকারে রসুনের ব্যবহার সবচেয়ে ভালো। এর অ্যান্টিভাইরাল ব্রণের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে। রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে পিষে রস বের করুন। এরপর সারারাত মুখে লাগিয়ে রাখুন আর দেখুন চমক।
পেঁপের ফেস ক্লিনজার
পেঁপে পেপাইন এবং কাইমোপ্যাপাইন এনজাইম সমৃদ্ধ। এটি একটি ভাল এক্সফোলিয়েটর বটে। পেঁপে ভিত্তিক ক্লিনজার ব্রণ কমায়। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। বাড়িতে এই প্রাকৃতিক ক্লিনজারটি তৈরি করতে, তিন টেবিল চামচ পেঁপের পাল্প, এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট বানিয়ে নিন। এটি আপনার মুখ এবং ঘাড়ে প্রয়োগ করুন। ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক ও চুলের যত্নে নারিকেল তেল
নারিকেল তেল সৌন্দর্যচর্চায় বিশেষভাবে পরিচিত। প্রাকৃতিক হেয়ারপ্যাক হিসেবে সবসময়ই নারিকেল তেলের উপর ভরসা রাখতে পারেন। চুল ধোয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে চুলে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার চুল পুষ্টি পাবে ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
সব থেকে ভালো উপটান মধু
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তাহলে মধু সব থেকে ভালো উপটান হিসেবে কাজ করতে পারে। ভালো ফল পেতে কাঁচা মধু পাতলা প্যাকের মতো করে মুখে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কালো দাগ দূর করে অ্যালোভেরা
ডার্ক সার্কেল সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা একটি চমৎকার সমাধান। এটি ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন ‘সি’ তে পরিপূর্ণ। রাতে অ্যালোভেরা জেল চোখের নিচের কালো দাগে লাগিয়ে রাখুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় হলুদ
প্রদাহজনিত কারণে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির ব্যবহার সুপরিচিত। অনেকে ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখতে ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে হলুদের প্যাক ব্যবহার করেন। সামান্য কাঁচা হলুদ, মধু ও দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রনের দাগ দূর করে নিম
নিম ব্রণ ও এর দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি ত্বকের ফুসকুড়ি ও লালচেভাব দূর করে। নিমের সঙ্গে মধুর মিশ্রণে প্যাক সৌন্দর্য ধরে রাখে। ত্বকের সজীবতা ফিরিয়ে দেয়।
জাফরানের টোনার
জাফরান স্কিনকেয়ারের মূল্যবান উপাদানগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রদাহ কমায়। ব্রণ মোকাবেলায় কার্যকর। ত্বককে পুনরুজ্জীবিত এবং উজ্জ্বল করতে এই গরমে জাফরান-ভিত্তিক স্কিনকেয়ার রুটিন ব্যবহার করে দেখুন। এক কাপ কাঁচা দুধে জাফরান ১-২ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এবার এই জাদুকরী মিশ্রণটি আপনার মুখে প্রয়োগ করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে গোলাপজল দিয়েও জাফরানের টোনার বানিয়ে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে, গোলাপজলে দুই ঘন্টা জাফরান ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপরে ব্যবহারের জন্য স্প্রে বোতলে স্থানান্তর করুন। এটি একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলের জন্য আমলার তেল
আমলা হচ্ছে বৈঁচি জাতীয় ফল। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। চুলের জন্য আমলার তেল অসাধারণ কাজ করে। অনেক প্রসাধনী কোম্পানিও এই তেল বাজারে ছেড়ে থাকে।
উজ্জ্বলতা বাড়ায় মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটির রয়েছে অনেক গুণ। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মুলতানি মাটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। এই মাটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ব্রণের দাগ দূর করে এবং ব্রণও দূর করে। ত্বকের টোনকে আরও হালকা করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
তুলসী ত্বকের ইলাস্টিসিটির উন্নতি করে
তুলসীর আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ বেশি। তবে ত্বকের যত্নেও কিন্তু তুলসী পাতা ভীষণ উপকারী। এতে আছে উপকারী এনজাইম, ভিটামিন সি এবং আরও সব উপকারী উপাদান। যা আমাদের ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বকের ইলাস্টিসিটির উন্নতি ঘটায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকে।
দই রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করে
টক দই ত্বকের তৈলাক্ত দূর করে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে। রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করতে টক দই খুব ভালো কাজ দেয়। এটিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের ভাঁজ ও দাগ দূর করে। দাগ ছোপহীন উজ্জ্বল ত্বক পেতে এই উপাদানের ভূমিকা অসাধারণ।
গ্রিন টি স্কিন টোন বজায় রাখে
গ্রিন টি জাপানের নারীদের রূপচর্যায় ব্যবহারের অন্যতম উপকরণ। গ্রিন টি দিয়ে ত্বক পরিচর্যার পাশাপাশি হেয়ার মাস্কও তৈরী করা যায়। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে, ব্রণ ও অ্যাকনে সমস্যা সমাধান করতে, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে ও স্কিন টোন বজায় রাখতে দারুণ কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ক্যামেলিয়া অয়েল
জাপানের মেয়েদের রূপচর্চার তালিকায় ক্যামেলিয়া তেল আবশ্যক একটি উপাদান। তারা ক্যামেলিয়া ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বেশি ব্যবহার করে থাকে। ক্যামেলিয়া অয়েল ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও গ্লিসারাইড সমৃদ্ধ। তাই এটি চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকর একটি উপাদান।
ত্বককে সুন্দর রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (প্রতিদিন অন্তত দেড় লিটার) পান করুন। যত বেশি পানি পান করবেন, আপনার রক্তসঞ্চালন তত বেশি পরিষ্কার ও দ্রুত হবে। ফলে দেহের প্রতিটি অঙ্গে রক্ত পৌঁছাবে। দেহের প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করবে। ফলে ত্বক হবে সতেজ।
ত্বকের ঔজ্জ্বল্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা সবজি, মৌসুমি ফল, শাক ও তেতো খাবার খান। সেইসঙ্গে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে পারেন। ত্বকে কোলাজেন সাপ্লাই বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
কালোজিরা, মেথি, পুদিনার পাতা, চিরতার রস, লেটুসপাতা ত্বকের কুঁচকে যাওয়া এবং বলিরেখা দূর করে। তাই সপ্তাহে অন্তত এক দিন এ খাবারগুলো গ্রহণের অভ্যাস করুন।