Saturday, April 20, 2024

বিস্মৃত স্মৃতি

সাজ্জাদুল বারী

তখন সবে নবম শ্রেণিতে পদার্পণ করেছি
সহপাঠীদের তখন শৈশবের পড়ন্ত বেলা চলছে।
হেডস্যার কড়া ধাঁচের বলে সবারই নিয়মিত উপস্থিতি
জানুয়ারি মাসেই চলছে সাত ঘণ্টা করে ক্লাস ।
বিশ্রাম বলতে চতুর্থ ঘণ্টার পর পঁচিশ মিনিট।
মাত্র কয়েক মাস আগে হাফ প্যান্ট ছেড়ে লুঙ্গি ধরেছি,
তখনও ভালো করে লুঙ্গির গিঁট বাঁধতে শিখিনি।
ক্লাসের শান্ত বালক হিসেবে জাহিদের বেশ খ্যাতি
সেই একদিন রম্নমির ভূগোল বই পড়তে নিয়েছিল।
দিন দুই পরে বই ফেরত দিতে গিয়ে ‘ভূ’ বাদ গেলে
যা থাকে তাই বাঁধলো। মানে গোল বাঁধলো।
কারণ বইয়ের মধ্যে জাহিদ একটি চিরকুট দিয়েছিল।
সেই চিরকুটে ছিল নাকি একটি বীজগণিতের অঙ্ক,
বই খুলেই রুমির সে কি কান্না; থামতেই চায় না।
ক্লাসের সবাই ভীষণ মার খেলাম সতীশ স্যারের হাতে,
তখন বুঝতে পারিনি কেন অঙ্কের জন্য মার খেলাম।
আসলে সেদিন কিন্তু আমরা অঙ্কের জন্য মার খাইনি,
মার খেয়েছিলাম অন্য একটি কারণে; তা হলো
অঙ্কটা সমাধান করলে উত্তর হতো ‘আই লাভ ইউ’ ,
যা পরে বন্ধু নজরম্নলের কাছ থেকে শিখেছিলাম।

মাধ্যমিক পাস করার পর সবাই ভিন্ন ভিন্ন কলেজে
সেই রুমিকে আর কখনো দেখিনি। মানে দেখা হয়নি।
ভার্সিটিতে উঠে ওকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, এই জন্য যে
সে এখন কোনো প্রিয়কে ‘আই লাভ ইউ’ বলেছে কি-না?
অথবা আদৌ সে ভালোবাসতে শিখেছে কি-না?
আরও কয়েক বছর পর হঠাৎই জাহিদের সঙ্গে দেখা
বাল্যবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ আলিঙ্গন হলো দীর্ঘদিন পর।
কুশলাদি বিনিময়ের পর জাহিদ নিজেই বললো,
মাধ্যমিকের পরে ওর মনের মধ্যে নাকি প্রেমের ফিউশন
বিক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যেন পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ার।
প্রতিবেশী নাজমার সঙ্গে গিঁট বাঁধলো ভালোবেসে।
এই দেখে বিদ্যার দেবী সরস্বতী মহা রুষ্ট হলেন,
অধ্যয়নে চিরতরে পূর্ণচ্ছেদ পড়লো জাহিদের।
ছোটোখাটো ব্যবসা করে ও নাকি বেশ ভালো আছে।

স্মৃতি হাতড়িয়ে বললাম, তোর রুমির খবর রাখিস কিছু?
হাসতে হাসতে ও বললো, এখনো মনে রেখেছিস দেখছি।
হ্যাঁ রেখেছি। সেদিনের মারের কথা ভুলি কী করে বন্ধু!
জাহিদের ভাষ্যমতে, মাধ্যমিকের পর রম্নমির সংসার হয়,
যার নাকি স্থায়িত্ব ছিল ত্রিশ মাস তেরো দিন।
এককন্যা জন্মাবার পরই রুমির আঁচলের গিঁট খুলে যায়।
দ্বিতীয়বার গিঁট বেঁধেও নাকি টানাটানিতে ছিঁড়ে গেছে।
ও এখন ভালোবাসার কাঙাল, ভিখারিণীও বলতে পারিস।

আজ রুমি যদি ধরায় থাকে ওর কাছে আমার প্রশ্ন;
সেদিন কিশোর জাহিদের চাওয়া কী খুব বেশি ছিল?
আমার বিশ্বাস সেদিন তুমি জাহিদের চাওয়া পূর্ণ করলে
আজ কাঙাল হতে না; পেতে অফুরান ভালোবাসা।
জাহিদের দেখা হতো শতসহস্র পুস্তকের সঙ্গে
আমরাও হয়তো সতীশ স্যারের মার খেতাম না।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর