শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়ের জুটিতে প্রথম সেশন ছিল বাংলাদেশের। তাদের ব্যাটেই প্রথম দিন ভালো কিছুরই আভাস পাচ্ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু শান্তর সেঞ্চুরির পরও শেষটা মনের মত হয়নি লিটন দাসের দলের। দারুণ শুরুর পর মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দিনটা মলিনভাবে শেষ হতে পারত বাংলাদেশের। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসানের জুটিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারে বাংলাদেশ।
দিনের শুরুতে টস জিতে বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে সময় নেননি আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ঠিক প্রমাণ করতে অবশ্য সময় নেননি অভিষিক্ত নিজাত মাসুদ। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই জাকিরকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরান এই পেসার। শূন্য রানে জাকির বিদায় নিলে মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গ দিতে আসেন নাজমুল হোসেন।
ধাক্কা সামলে জয় ও শান্তর জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লিটন দাসের দল। যদিও আর কোন উইকেট না হারিয়ে ভালো অবস্থানে থেকেই লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ঘন্টায় ৪৫ রান স্কোরবোর্ডে রান যোগ করে বাংলাদেশ। তবে পরের ঘন্টার শুরু থেকে আরও একটু দ্রুতগতিতে রান যোগ করেন শান্ত-জয় জুটি।
দলকে হাফ সেঞ্চুরির ঘর পার করিয়ে একশোর পথে নিয়ে যান দুজন। তিনে নামা নাজমুল প্রতিপক্ষ বোলারদের ৮০’র বেশি স্ট্রাইক রেটে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ৫৮ বলে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। অপরপ্রান্তে থাকা জয় মন্থর ব্যাটিংয়ে ভালো সঙ্গ দিচ্ছেন তাকে। তিনিও হাঁটছেন হাফ সেঞ্চুরির পথে। ৭০ বল খেলে রান করেছেন ৩৮। প্রথম সেশনে নিজেদের মাঝে সেঞ্চুরি জুটি গড়ে এক উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় লিটনবাহিনী।
বিরতি শেষে ফিরে জয়কে দর্শক বানিয়ে দলকে একাই টেনে নিতে থাকেন শান্ত। আফগান বোলারদের বিপক্ষে দারুন ব্যাটিং করে এই ক্রিকেটার দলকে টেনে নিয়ে যান দেড়শোর ঘরে। নিজেদের মাঝে দেড়শ রানের জুটিও গড়েন তারা।দেড়শ রানের জুটিতে জয়ের তুলনায় শান্ত রান তুলেছেন একটু দ্রুত গতিতেই।
তা ছাড়া জয় যেখানে যোগ করেছেন মাত্র ৪৭ রান, সেখানে শান্ত যোগ করেন ৯২ রান। তবে শান্তর আগে ১০২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়। অন্যদিকে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে শান্ত’র একশোর মাইলফলকে পৌছাতে একটু সময় নেন শান্ত।
সঙ্গীর মাইলফলক স্পর্শের পরই খেই হারিয়ে বসেন জয়। রহমত শাহর করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের খাটো লেংথের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দেন জয়। আর তাতেই শান্তর সঙ্গে তার ২১২ রানের জুটি ভাঙে। জয় ফেরেন ১৩৭ বলে ৭৬ রান করে।
এরপর নতুন ক্রিজে আসা মুমিনুল হকেরও পরীক্ষা নেন রহমত। অফ স্টাম্পের ওপর হালকা ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে বল মিস করেন মুমিনুল। তা সোজা আঘাত হাতে প্যাডে। আফগান ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর রিভিউ নেয় আফগানিস্তান।
রিভিউতে দেখা যায় বলের লাইন ও লেন্থ ঠিক থাকলেও স্টাম্পের বেল ছুঁয়ে যেত বল। ফলে আম্পায়ার্স কলের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যান মুমিনুল। জীবন পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি এই ক্রিকেটার। নিজাত মাসুদের ছোড়া কনুই ছোঁয়া বাউন্সার খেলতে গিয়ে দোটানায় পড়ে ছেড়ে দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কিপারের তালুবন্দি হন মুমিনুল। ১৫ রানে ফেরেন তিনি।
অন্যদিকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শান্ত ছুটেছিলেন আরও বড় সংগ্রহের পথে। দলকেও টেনে নিচ্ছিলেন ৩০০’র পথে। তাকে সঙ্গ দেয়া মুশফিকুর রহিম খেলছিলেন দেখেশুনেই। তবে নো বলে বোল্ড হয়ে জীবন পাওয়া শান্ত নিজেকে দেড়শর ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি।
আমির হামজার বলে সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে নাসির জামালের তালুবন্দি হন তিনি। ১৪৬ রান করে শেষ পর্যন্ত থামেন শান্ত। এরপর ক্রিজে নেমে লিটন দাস বেশীক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি। মাত্র ৯ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
মুশফিককে সঙ্গ দিতে এরপর ক্রিজে আসেন মেহেদি হাসান। তাদের ব্যাটে দলের রান ৩০০’র ঘর পার হয়। দুজন মিলে টানতে থাকেন দলকে বেশ ভালোভাবেই। নিজেদের মধ্যে অর্ধশত রানের জুটি গড়ে দলকে সাড়ে তিনশর ঘরে নেন দুজন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ৩৬২/৫ (শান্ত ১৪৬, জয় ৭৬) (মাসুদ ২/৬৭)