গত মঙ্গলবার (৯ মে) ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খান একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বুবলীর সঙ্গে তার অধ্যায় পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, বুবলীকে আমার সঙ্গে আর অনস্ক্রিন–অফস্ক্রিন কোথাও দেখা যাবে না।
শাকিব খানের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে পরদিন বুধবার (১০ মে) বুবলী ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে শাকিবের দিকে বেশ কিছু অভিযোগ ছুঁড়ে জানান, তাদের এখনও ডিভোর্স হয়নি এবং এখনও দুজনের সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই সঙ্গে এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বুবলী।
এবার সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে শাকিব খান জানালেন, বুবলী মিথ্যাচার করছেন। শুধু তাই নয়, নানা জনের সঙ্গে বুবলীর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পর্ক’ গড়ে তোলার অভিযোগও শাকিবের।
আপনি বলছেন বুবলী অধ্যায় শেষ, কিন্তু বুবলী বলছেন আপনাদের এখনো সম্পর্ক রয়েছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শাকিব বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। সে যখন বলছে আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক রয়েছে তাহলে সে-ই প্রমাণ দিক। কারণ সে তো একজন শিক্ষিত মেয়ে। তাই তার মতো একজন শিক্ষিত মেয়ের কাছে তো কোনো মিথ্যা বলার মতো বোকামি কেউ আশা করবে না।’
দুজনের সম্পর্কের অবনতি এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘দেখুন, সে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করে সম্পর্ক, সন্তান, অর্থবিত্ত, নাম সবই করেছে। আমিও তাকে অন্ধ বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু শেহজাদকে জন্ম দেয়ার পর আমেরিকা থেকে দেশে এসে সে নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ল। নানা জনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলল। যা মিডিয়াসহ সবাই জানে। একই সঙ্গে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট এবং ৫৬ লাখ টাকার গাড়ির মালিক হলো, হঠাৎ করে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া কীভাবে সম্ভব।’
সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বিনা কারণে বিশ্বাসভঙ্গ করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে কনটিনিউ করা যায় আপনারাই বলুন।’
শাকিব আরও যোগ করেন, ‘আমি আসলে সরল মনে অনেককেই বিশ্বাস করেছি। কিন্তু সবাই আমার সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে ধোঁকা দিয়েছে। অকৃজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। আমি এখন আর কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না। আর কোনো মানসিক চাপ সহ্য করতে চাই না। শুধু দুই সন্তান জয় ও বীরকে নিয়ে বাকি জীবনটা সাধারণ মানুষের মতো পরম শান্তিতে কাটাতে চাই।
সন্তান জন্মের কথা বুবলীই প্রথম প্রকাশ করেছেন, এর আগে আপনারা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শাকিব বলেন, ‘দেখুন, পার্সোনাল বিষয়কে আমি কখনো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করতে চাই না। তাই কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু বুবলীকে তো কাউকে বলতে বারণ করিনি। সে কেন তখন এ নিয়ে কিছু বলল না। সে এতটাই ক্রিটিক্যাল মাইন্ডের যে, গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর আমার ছেলে জয়ের জন্মদিনে তার বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ করে আমাকে বিব্রত ও ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করল।
‘একই সঙ্গে নানাজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের স্ক্যান্ডাল চাপা দিতেই সে তখন হুট করে তার বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ করে বসল। তার মনে যদি কোনো দুষ্ট বুদ্ধি না থাকত তাহলে সে তো আগেই এই ছবি প্রকাশ্যে আনতে পারত। এখন আবার কোন স্বার্থ হাসিল করতে আমার সঙ্গে সম্পর্কের কথা তুলে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে।’
অপুর বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ের কথা গোপন করে রেখে তার সঙ্গে সম্পর্ক করেছিলেন এমন অভিযোগও তুলেছিলেন বুবলী; এমন এক প্রশ্নের জবাবে শাকিব বলেন, ‘তার এই অভিযোগ একদম মিথ্যা। সবাই জানে আমার ও অপুর বিয়ের কথা, অথচ সে জানে না, এটি চরম মিথ্যা ছাড়া আর কি হতে পারে। এ নিয়ে তখন তো অপু তাকে গালাগালও করেছে। একজন লোকের বিয়ে করা বউ থাকার পর কী সে আরেকটি বিয়ে করতে পারে।
‘বুবলী তো নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাকে শুধু সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। এখনো সে নিজেকে আমার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। আবারও বলছি সে প্রমাণ করে দিক সে আমার স্ত্রী। বুবলী এখন আমার স্ত্রী নয়, এ কথা আমি আর কতবার বলব।’
ডিভোর্স আসলে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শাকিব বলেন, ‘সেটা সে-ই বলুক। সে যখন এখনো নিজেকে আমার স্ত্রী দাবি করছে, তাহলে সে-ই প্রমাণ করে দিক বিষয়টি।’
বুবলী দাবি গেল ঈদে আপনার বাসায় গিয়েছিলেন, আপনাকে খাইয়ে দিয়েছেন, একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন, সময় কাটিয়েছেন কথাটি সত্য কিনা? জবাবে শাকিব বলেন, ‘দেখুন, আমাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এটিও তার একটি পাতা ফাঁদ ছিল। তার সঙ্গে সম্পর্কের পর এক দিনের জন্যও সে আমাদের বাসায় থাকেনি। আমার বাসার কারও সঙ্গে তার কথাও হয়নি। আগে পরিচয়ও ছিল না। সে জোর করে আমার বাসায় এসে সিন ক্রিয়েট করার চেষ্টা করে। শেহজাদের জন্মদিনেও সে জোর করে আমার বাসায় এসেছে। শেহজাদকে তার ন্যানিই আমার বাসায় নিয়ে আসে। অথচ ঈদের দিনও পরিকল্পিতভাবে বুবলী আমার বাসায় এসেছে। যেখানে আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই, সেখানে আমার বাসায় সে আসবে কেন? ঈদের দিন বাসায় কেউ এলে তাকে তো আর বের করে দেয়া যায় না।
‘অথচ এর আগে একবার তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হয়েছিল। যাক, ঈদের দিন সে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে বাসার সবাই বসে খেয়েছি। তারপর শেহজাদকে নিয়ে গাড়িতে করে যখন বেড়াতে বের হচ্ছিলাম তখন বুবলীও গাড়িতে উঠে পড়ে এবং পেছনের সিটে বসে থাকে। তার রান্না করা বা তার হাতে কোনো খাবারই আমি খাইনি। আসলে সেদিন ঈদের সুযোগ নিয়ে সে আমার বাসায় এসেছিল। মিথ্যা বলে আবার আমাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এবং পরে সে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে তাই করার চেষ্টা করেছে।’
সবশেষ বুবলীর উদ্দেশে শাকিব বলেন, ‘আমি তাকে বলব সে যেন এই নতুন স্ট্যাটাসের নাটক বন্ধ করে। সে বলেছে আমার বিরুদ্ধে সে নাকি মুখ খুলবে, আমি তাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, সে যেন মুখ খুলে। আমি তো সন্তানের স্বার্থে মুখ বন্ধ করে তার দেয়া সব মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে আসছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আর মুখ বুঝে থাকব না।
‘সে ও তার পরিবার আমার ওপর যা ঘটিয়েছে সব খুলে বলতে সে যেন আমাকে বাধ্য না করে। আমি আবারও তাকে বলছি সন্তানের ভালোর দিকে তাকিয়ে সে যেন এসব নোংরামি বন্ধ করে। আমার জীবদ্দশায় আমি তার ছায়াও আর দেখতে চাই না। আমার ধারেকাছে আসা এবং আমার বাসায় প্রবেশের কোনো অধিকার তার নেই। তার আর কোনো নাটক আমি দেখতে চাই না।’