চলছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। মধু মাসে বিভিন্ন ফলের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু এবং লোভনীয় ফল আম। আম পছন্দ করে না এমন ব্যক্তি পাওয়া খুব মুশকিল। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, বিটা ক্যরোটিন, ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপকারী উপাদানে ঠাসা এই ফল৷ তাই নানা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৷
আমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং খাদ্য আঁশ। এই খাদ্য আঁশ এবং এন্টিওক্সিডেন্ট রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সেই সঙ্গে ব্লাড গ্লুকোজকে বাড়তে দেয় না। আমে বিদ্যমান ভিটামিন এ এবং সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। এছাড়া ভিটামিন কে, বি ভিটামিন্স, ফোলেট, ভিটামিন ই-ও আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
আমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণসহ হার্ট ভালো রাখে। খাবার পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, পানি, খাদ্য আঁশ ও অন্যান্য উপাদান থাকার কারণে এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্যও উপকারি।
আমে বিদ্যমান ভিটামিন চোখের জন্যও খুব উপকারি। আমে যে পরিমাণ সুগার রয়েছে তা থেকেই প্রায় ৮০-৯০% ক্যালরি পাওয়া যায়। আম এমনই একটি ফল যাতে মিষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি । তবে মিষ্টির পরিমাণ বেশি থাকলেও আম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয় । যদিও আমে শর্করা এবং সুগার রয়েছে, তাই বলে একেবারে আম খাওয়া যাবে না এমনটি নয়। একটু সতর্কতার সঙ্গে ডায়বেটিক রোগী তাদের খাদ্য তালিকায় আম রাখতে পারবেন।
ফলের রাজা আমের স্বাদ অতুলনীয় হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে৷ কারণ এতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ অনেক বেশি৷ ব্লাড সুগারের রোগীর ক্ষেত্রে রক্তে অতি দ্রুত বেড়ে যায় শর্করা৷ তাহলে কি গরমকালে একটুও আম খাবেন না ডায়াবেটিস রোগীরা?
একটি খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স র্যাঙ্ক বলতে ০-১০০ স্কেলে পরিমাপ করা হয়, যেখানে ৫৫ পর্যন্ত খাবারে চিনির পরিমাণ কম বলে বিবেচিত হয়। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স র্যাঙ্ক ৫১, এমনকি সুগারের রোগীরাও এটি সীমিত পরিমাণে খেতে পারেন। পুষ্টিবিদদের মতে, যে নিয়ম মানলে ডায়াবেটিস রোগীরাও আম খেলেও রক্তে শর্করা বাড়বে না উল্লেখযোগ্য হারে৷
আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিমাণ। আমের পরিমাণের ওপর আপনার ব্লাড গ্লুকোজ অনেকটা নির্ভর করবে। ছোট টুকরো করে কাটা ১/২ কাপ পরিমাণ আম খাওয়া যেতে পারে। একবারে অনেক বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না। দৈনিক বরাদ্দকৃত শর্করার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। ব্লাড গ্লুকোজ সব সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ১/২ কাপ পরিমাণ আম থেকে ১০-১৩ গ্রাম এর মত শর্করা পাওয়া যাবে। তাই একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া নিরাপদ। ২-৩ স্লাইস আম অন্তত ৩ দিনের হিসেব করে খাওয়া ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, আমের টুকরো খান৷ রস করে কখনও খাবেন না৷ রস বার করলে আমের ফাইবারসুলভ সব গুণ নষ্ট হয়ে যায়৷
আমের সঙ্গে কিছু দানা বা বীজ বা বাদামজাতীয় জিনিস খেতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের৷ তাহলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দ্রুত বাড়বে না৷
লাঞ্চ, ডিনারের আগে বা সঙ্গে বা ঠিক পরে আম খাবেন না ডায়াবেটিকরা৷ এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ এক লাফে বেড়ে যাবে অনেকটাই৷ স্বল্প পরিমাণে আম খেতে হবে ডায়াবেটিকদের৷ একবারে দু’ টুকরোর বেশি আম কোনওমতেই খাবেন না৷ সপ্তাহে এক বা দু’দিন আম খান৷ রোজ কখনওই আম খাবেন না৷
পুষ্টিবিদদের মতে, আম খেলে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রাতরাশের সঙ্গে খান৷ তার পর দিনের সময় যত এগোবে, আম আর খাওয়া চলবে না ডায়াবেটিস রোগীদের৷ গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার গ্রহণের সময় ঠিক রেখে, সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেলে এবং শর্করার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেলে তা ডায়বেটিক রোগীর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই উপকারি। শরীরে কম পানি থাকা মানেই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকা। তাই পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আম যদি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে তা আপনার উপকার করতে পারে । অল্প পরিমাণে আম খেলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে না । চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস রোগী যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে তারা আম খেতে পারেন । ডায়বেটিক রোগীরা খাদ্য তালিকা থেকে আম একেবারেই বাদ না দিয়ে বরং একটু সতর্কতার সঙ্গে আম খেতে পারবেন।