এখন এ দেশ আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারেবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে আমি সত্যিই আশাবাদী যে এ দেশ আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারেবে না। আবার সেই অন্ধ যুগে নিতে পারবে না।’
রোববার মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০২৩ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এসময় নিজের কারামুক্তি দিবসের কথা উল্ল্যেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অবশ্য অনেক বারই বন্দি হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথম ১৯৮৩ সালে বন্দি হলাম। এরপর ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০- বারবার কখনো গৃহবন্দি, কখনো রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে, ডিজিএফআইয়ের হেড কোয়ার্টারে নিয়ে গেছে।’
‘গ্রেনেড, গুলি, বোমা হামলা- সবকিছু মোকাবিলা করে আবার ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ এর পর ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে স্বাধীনতার পরের ৫০ বছরে এই প্রথম। আর সেটা আছে বলেই দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শিক্ষাখাতে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ এর সরকার এসে, অন্যদেশের সঙ্গে সামজ্ঞস্য রেখে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করি। আগে আমাদের ছেলেমেয়েরা গ্রাজুয়েট হয়েও বিদেশে পড়শোনা করতে পারত না।’
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ আজকে সফল হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের সঙ্গে যদি আমরা তাল মিলিয়ে না চলতে পারি আমরা সামনের দিকে এগোবো কীভাবে?
বিশ্ব তো পরিবর্তনশীল, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম বলেই করোনা মোকাবিলা আমাদের জন্য সহজ হয়। এমনকি যখন স্কুল কলেজ সব বন্ধ তখন আমাদের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে লেখাপড়া করতে পেরেছে। আজকে আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেধা বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। তাদের মধ্যে যে উদ্বাবনী শক্তি, সেটা বিকশিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’ ‘দেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে’ জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিয়ে যখন মানুষ কষ্ট ভোগ করছে, তখন খাদ্যশস্য আমাদের এখানে পাওয়া যাচ্ছে। প্রাপ্তির অভাব নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারে এসে দেখি, এখানে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই , কোনো টাকা নেই এবং গবেষণার দিকে কারও দৃষ্টিও নেই। এমনকি বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী পাওয়া যায় না, এমন এক অবস্থা ছিল। তখন আমি প্রথম গবেষণার জন্য টাকা দিলাম। প্রথম দেয়া হলো ১২ কোটি টাকা। এরপরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখলাম। আমাদের প্রথম প্রাওরিটি ছিল কৃষি, খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করব।’
কৃষি গবেষণায় আমরা সাফল্য অর্জন করলাম এবং ৩-৪ বছরের ভেতর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে আমাদের গবেষকরা যা কিছুই হোক উৎপাদন করতে পারে, যেটাই নিয়ে আসে সবই করতে পারে। আজ টিউলিপ ফুল বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। এভাবেই যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ আমরা দিই, তাহলে এই দেশকে কখনো কেউ আর পেছাতে পারবে না।’
আজকের মেধাবীরাই হবে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাণ্ডারি- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ জাতীয় পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সেরা ১৫ শিক্ষার্থীর হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫২ লাখ ১৪ হাজার ৬৫০ শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ১২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা অনলাইন মাধ্যমে অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। স্নাতক পর্যায়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে ৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা।