আমরা জাতি হিসেবে অনেক আবেগপ্রবণ। নতুন কোন কিছু কে খুব সহজে গ্রহণ করতে পারিনা বা মেনে নিতে একটু সময় লাগে। আমরা তো ঘরের কোনো পুরনো ফার্নিচারও ফেলতে চাই না। আমার ছোট বোন কে দেখেছি নতুন ব্যাগ কেনার পরেও যত্ন করে পুরনো ব্যাগের চেইন ঠিক করছে।
আজ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছু লিখবো, যে শিক্ষাক্রম আমাদের নিউরনে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।
#নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রথমেই যে কথাটি বারবার শুনছি, এই শিক্ষাক্রমে কোনো পরীক্ষা নেই। অথচ প্রতিটি ক্লাসে প্রতিটি অধ্যায় পড়ানোর সময় শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিক মূল্যায়নের শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না শিক্ষার্থীর ব্যক্তিক ও সামাজিক আচরণ ও মূল্যবোধ প্রত্যক্ষ করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
#আর একটি ভুল ধারণা, গ্রামার পড়ানো হচ্ছে না। আমরা এক সময় গ্রামারের নিয়ম গুলো তোতাপাখির মতো কণ্ঠস্থ করেছি। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমে গ্রামারের নিয়ম গুলোকে প্রায়োগিকভাবে শেখানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা চাপ মুক্তভাবে শিখছে অথচ বুঝতেই পারছে না তারা কত সহজে গ্রামারের কঠিন নিয়ম গুলো রপ্ত করে ফেলছে।
#এই শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্যই হলো একটি স্বনির্ভর এবং দক্ষ ঐক্যবদ্ধ জাতি বিনির্মাণ করা। গ্রুপ ওয়ার্ক এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রথম হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে তার পুরো টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হচ্ছে ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে প্রতিটি প্রাণ।
#শিক্ষা মানে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার মূল অংশ। একজন অভিভাবক একদিন গর্ব করে বলেছিলেন, “আমার মেয়ে তো একটা পেঁয়াজও কাটতে পারে না।” অথচ বেশি যত্ন নিতে গিয়ে তার মেয়েকে তিনি ফার্মের গৃহপালিত তৈরি করেছেন এটি বুঝতে হয়তো তার একটু সময় লেগে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিশ্চয় পুরো বছর ধরে রান্না শিখবে না, একটু বোঝার চেষ্টা করলে হয়তো নতুনকে গ্রহণ করতে আমাদের নিউরনে চাপ পড়বে না।
#আমরা কিছুতেই মুখস্ত বিদ্যা থেকে প্রায়োগিক শিক্ষার পার্থক্য বুঝতে পারছিনা। প্রায়োগিক শিক্ষা যে একজন শিক্ষার্থীকে তার কর্মক্ষেত্রে প্রচন্ডভাবে দক্ষতা সম্পন্ন করে তুলবে এটি বুঝতে পারা এখন সময়ের দাবি।
আজকের শিশু ভবিষ্যতের দক্ষ প্রকৌশলী, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, গবেষক থেকে শুরু করে তার প্রিয় ক্ষেত্রটিতে দক্ষতার সাথে বিচরণ করবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের সুফল পাওয়ার জন্য আমাদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। একটি মননশীল ও দক্ষ জাতি তৈরির জন্য একটু ধৈর্য আর সময়, ব্যাস এতটুকুই।