Friday, January 17, 2025

গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা ক্ষুধার্ত: সতর্কতা জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দুইমাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা বর্বরোচিত বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। স্থল পথেও সেনা অভিযান চলার কারণে ভূখণ্ডটিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই থাকছেন অনাহারে।

জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন ত্রাণ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রোববার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

 

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ বলেছেন, প্রয়োজনীয় সরবরাহের সামান্য কিছু অংশই গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই অনাহারে দিন পার করছে। গাজার পরিস্থিতি ত্রাণ সরবরাহ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।

এদিকে হামাসকে নির্মূল করতে এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচ্ট শনিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যেকোন বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু বেদনাদায়ক, তবে আমাদের কাছে বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতেও আমরা যতটা পারছি সংযত থাকার চেষ্টা করছি।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতর হামাসের হামলায় অন্তত ১২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৪০ জনকে জিম্মি করার পর থেকে গাজার ভেতরে এবং বাইরে চলাচল ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে।

এর জবাবে, ইসরায়েল গাজার সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দেয় এবং এই অঞ্চলে বিমান হামলা শুরু করে, ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করে যার উপর গাজাবাসী ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল তার প্রতিশোধমূলক অভিযানে ১৭ হাজারেও বেশি গাজাবাসীকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৭ হাজারের বেশি শিশু।

এখন পর্যন্ত শুধু মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সীমিত পরিমাণে সাহায্য গাজায় পৌঁছাতে পারছে। অবশ্য এই সপ্তাহে ইসরায়েল শুধুমাত্র ত্রাণ সরবরাহের শর্তে কেরাম শালোম ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয়েছে।

ডেপুটি ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ এই সপ্তাহে গাজা ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, তারা গাজার মানুষদের মাঝে ভয়, বিশৃঙ্খলাসহ হতাশায় ভুগতে দেখেছেন, যার জন্য তিনি এবং ডব্লিউএফপি টিম কেওই প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি জানান, তারা একে একে গাজার খাদ্য গুদাম, সুপারমার্কেট, বিতরণ পয়েন্ট সব স্থান পরিদর্শন করেছেন। এসব স্থানে তারা হাজার হাজার হতাশ ক্ষুধার্ত মানুষকে ঘুরতে দেখেছেন।

গাজায় সাত দিন যুদ্ধবিরতিকালে কিছু ত্রাণসামগ্রী ঢুকেছে। তা বিতরণ করার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। কিছু মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভবও হয়েছে। কিন্তু ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, দুঃখের বিষয় হলো, এই বিষয়ে যতটা এগোনো জরুরি ছিল, তা হয়নি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার ফলে ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে কর্মীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে বেসামরিক সাধারণ মানুষ বিপর্যয়ে পড়েছেন। গাজায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল হলো এই ত্রাণের খাদ্যশস্য।

ডব্লিউএফপি বলছে, আমাদের কর্মীদের জন্য গাজায় নিরাপদ, বাধাহীন ও দীর্ঘকালীন যাতায়াতের ব্যবস্থা চাই। তাহলে তারা মানুষের কাছে জীবনদায়ী ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে। একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী শান্তি হলেই এই মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। ডব্লিউএফপি তাই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি এবং সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান চায়।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর