চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারাদেশে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারলে এবার বোরোতে রেকর্ড উৎপাদন হবে। এমন আশা প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডেকার হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসব ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ আশা প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘হাওরে বোরো ধান কাটা চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে শুধু সুনামগঞ্জেই এক হাজার কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা চলছে। আশা করছি, ৩০ তারিখের মধ্যেই হাওরের ধান কাটা হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও সময়মতো কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারলে চলতি বছরে বোরোতে রেকর্ড উৎপাদন হবে।’
হাওরে ধানকে ঝুঁকিমুক্ত ও শঙ্কামুক্ত করতে সরকারের নানান পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরের ধান ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছর আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। হাওরের ধানকে ঝুঁকিমুক্ত ও শঙ্কামুক্ত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ প্রতিফলিত হবে। পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে যাচ্ছি। এর সুফল আমরা পাচ্ছি। গত কয়েক বছর ধরে দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটা যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘হাওরে স্বল্পজীবনকালীন ও ঠাণ্ডাসহিষ্ণু আগাম জাতের ধান চাষে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এই ধান ১৫ দিন আগেই পাকে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাতগুলো দ্রুত সম্প্রসারণ করতে পারলে হাওরের ধান ঘরে তোলা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকবে না। পানি আসার আগেই ঘরে ধান তোলা যাবে।’
ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান চাষ না করার জন্য কৃষকদের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রি-২৮ জাতটি পুরোনো হয়ে গেছে। এ জাতের ধান সহজেই ব্লাস্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উৎপাদনশীলতাও কমে গেছে। ব্রি-২৯ একটু দেরিতে পাকে। এসব জাতের পরিবর্তে উচ্চ উৎপাদনশীল নতুন জাত যেমন ব্রি- ৮১, ব্রি- ৮৯ ও ব্রি- ৯২ চাষ করতে হবে। এসব জাতের ফলন প্রতি শতকে এক মণেরও বেশি।’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল প্রায় দুই কোটি দুই লাখ টন।
এদিকে, হাওরভুক্ত সাত জেলা অর্থাৎ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরের ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। হাওরভুক্ত সাত জেলায় মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে হাওর এলাকায় বোরো আবাদ হয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টন।