Tuesday, November 26, 2024

জিম্মি জাহাজ আবদুল্লাহ থেকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ছে জলদস্যুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ থেকে নিজেদের ‘শক্ত’ অবস্থান জানান দিতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ছে দস্যুরা। গতকাল শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে জিম্মি এক নাবিকের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান নাবিক পরিবারের এক সদস্য।

এছাড়া জাহাজের বিভিন্ন পাশে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে তারা। ইইউ জাহাজের উপস্থিতিতে বন্দি ২৩ নাবিকের ওপর কড়াকড়িও আরোপ করছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। তবে এখনও পর্যন্ত সব নাবিক সুস্থ আছেন।

জানা যায়, জাহাজে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য পানি ব্যবহার নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নাবিকদের। ৩০ থেকে ৩৫ জন সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকছে। যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতির পর থেকে জলদস্যুরা নাবিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। কেবিনে থাকতে দেয়া হচ্ছে না নাবিকদের। একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে সবাইকে। এছাড়া খাবার নিয়েও কষ্টে আছেন নাবিকরা।

এদিকে, উত্তর পশ্চিম ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তায় ইউরোপীয়ান নেভাল ফোর্স গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বাহিনীটি এমভি আব্দুল্লাহর কাছে তাদের অবস্থানের তিনটি ছবি ও একটি ভিডিও প্রকাশ করে।

ইইউ নেভাল ফোর্সের সদস্যদের নজরদারির পাশাপাশি ওই আকাশসীমায় তাদের হেলিকপ্টারও টহল দিতে দেখা যায় ভিডিওতে। ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও কোনো অভিযানের বিষয়ে জানায়নি।

জাহাজের মালিক কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা যোগাযোগের পর প্রাথমিক পর্যায়ের আলাপ শুরু করেছেন তারা। আনুষ্ঠানিক আলোচনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা কোনোভাবেই সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো কিছুর প্রতি আমাদের সমর্থন নেই।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমেও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে একই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এর আগে, জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়। তবে অভিযান চালানো হলে জিম্মি থাকা নাবিকদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই জাহাজের নাবিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে এমন কোনও অভিযানে সমর্থন নেই বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ।

এর আগে, জিম্মি করার আট দিন পর গত বুধবার দুপুরে প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে সোমালি জলদস্যুরা। তবে এখনও কী আলোচনা হয়েছে তা জানায়নি জাহাজের মালিকপক্ষ।

সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী জাহাজটি এখন সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে দস্যুরা।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুরে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেয়া হয় নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলার।

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর