নিজস্ব প্রতিবেদক
সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় শনিবার (১ জুন) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার।
এ সময় পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার বিষয়ে জানিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, জুন থেকে আগস্ট-এ তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এছাড়া এ সময়ে বন্যপ্রাণীরও প্রজনন মৌসুম।
ইতোমধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সব পাস-পারমিট দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জুন থেকে আগস্ট- এই ৩ মাসকে সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া এই সময়টি বন্য প্রাণীর জন্যও প্রজনন মৌসুম। সে কারণে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালে এই তিন মাস মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৩ মাস বনে পর্যটক না গেলে বনের জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণী নিরুপদ্রব থাকবে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্রের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে শুক্রবার (৩১ মে) সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন জেলেরা। এদিন সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসা শতাধিক মাছ ধরা নৌকা নদীর তীরে বেঁধে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নৌকা মেরামতের জন্য বেড়িবাঁধের ওপর উঠিয়েও রেখেছেন।
এ সময়ে বনজীবীদের সরকারি সহায়তার দাবির বিষয়ে বন সংরক্ষক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এই তিন মাস প্রান্তিক জেলে-বাওয়ালিদের বিকল্প খাদ্য সহায়তা দেয়ার। বিকল্প খাদ্য ও সহায়তার জন্য জেলে-বাওয়ালিদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি চাল দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা বনজীবীদের একটি তালিকাও পাঠিয়েছি।
এ চাল দেয়ার সিদ্ধান্তটি নেয়া খুবই জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় হয়ে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।