ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায়ই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শনিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বেশ কয়েকটি গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আংশিক চালু অথবা বন্ধ থাকছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অনাকাঙ্ক্ষিত এই অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়া মাত্রই ভাসমান টার্মিনালগুলো পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করা হবে।’
এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবজনিত কারণে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীতে বেশ কয়েকবার লোডশের্ডি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের আশঙ্কা থেকে চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ফেনীতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন।
শনিবার বেলা১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ পরিপূর্ণভাবে বন্ধ রাখে বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ফেনী জেলায় সব ধরনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই পর্যন্ত গ্রাহকদের সতর্ক ও নিরাপদে থাকার অনুরোধ করে জানান এ কর্মকর্তা।
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২২০ কোটি ঘনফুট। বাকিটা জোগান দেয়া হয় আমদানি করা এলএনজির মাধ্যমে।
গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে এক বার্তায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে তিন হাজার মেগাওয়াট।
উল্লেখ্য, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ সকালে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এটি বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া আরও কয়েকটি জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।