গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাবা আজমল হোসেন পাঠানের কবরের পাশে সমাহিত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত চিত্রনায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের সোমটিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে ফারুকের পঞ্চম জানাজা শেষে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এসময় ফারুকের রাজনৈতিক সহকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, চিত্র নায়ক ফারুকের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রহীরা ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে ফারুককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করেন কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. আসসাদিক জামান।
জানা যায়, জীবিত অবস্থায় চিত্রনায়ক ফারুক অসিয়ত করে যান মৃত্যু হলে তাকে যেন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। সেই অসিয়ত অনুযায়ী চিত্রনায়ক ফারুককে তার বাবার পাশেই কবর দেওয়া হয়।
এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে চতুর্থ জানাজা শেষে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ফারুকের লাশবাহী মরদেহ।
সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান নায়ক ফারুক। সেখানে তিনি জিবিএস নামে বিরল এক নিউরোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। সোমবার রাতেই সিঙ্গাপুরে ফারুকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে মরদেহ আনা হয় ঢাকায়। নেয়া হয় নায়কের উত্তরার বাসভবনে। তারপর আজ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অভিনেতাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ফারুকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এফডিসি থেকে ফারুকের মরদেহ নেয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে।
ফারুকের প্রকৃত নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে তার জন্ম। চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে। অভিনয় করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘মিয়া ভাই’।
এর মধ্যে ‘লাঠিয়াল’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে তাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ক্ষমতাসীন এই দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৬ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে। সে সময় তার নামে ৩৭টি মামলা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ফারুক।