দেশে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, লিচুর বিচি গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শিশুর অধিকাংশেরই বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বিশেষ করে ৬-৭ মাস বয়সী শিশুদের তো বিচিসহ লিচু খাওয়াই ঠিক নয়।
শিশুর গলায় খাবার বা কোনো কিছু আটকে গেলে প্রথমেই তার শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হবে। কখনো কাশি হবে, বমি বমি ভাব, বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো শব্দ, স্বাভাবিক কিংবা একদমই কথা বলতে না পারা, ঠোঁট নীল হওয়া বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুর গলায় লিচু বা অন্য কোনো ফলের বিচি আটকে গেলে ৭ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে তাকে বাঁচানো কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা তাৎক্ষণিক ভুল চেষ্টা করে শিশুর আরও বিপদ বাড়িয়ে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা করণীয় সম্পর্কে বলেছেন, হঠাৎ করেই কেউ এ পরিস্থিতিতে পড়লে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুহাত দিয়ে তার পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে। এতে গলায় আটকে যাওয়া বিচি বের হয়ে আসবে। শিশু যদি অনেক ছোট হয় তাহলে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুর করে তার পিঠে চাপড় দিতে হবে।
তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিকটসস্থ কোনো হাসপাতালে নিতে হবে। বিচিটি বের না হওয়া বা চিকিৎসা শুরু না করার আগ পর্যন্ত এভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। এ সময় শিশু বা রোগীর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে. তার জ্ঞানের মাত্রা কমছে কিনা, হার্ট বন্ধ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হচ্ছে কিনা। এমনটা হলে পাশে থাকা মানুষদের দ্রুত বুকে চাপ তথা সিপিআর করতে হবে।
স্বাভাবিকবাবেই ছোট শিশুদের নাগালে ছোটখাটো কোনো কিছু রাখা উচিত নয়। আবার যখন তাদের খাওয়ানো হয়, তখন বেশি তাড়াহুড়োও করা যাবে না। অনেক সময় মায়েরা তাদের শিশুর মুখে কিংবা অসুস্থ-বয়স্ক রোগীদের মুখে খাবার গুঁজে দিয়ে থাকেন। এটা মোটেও উচিত নয়।
এছাড়া সন্তানের নিরাপত্তা ও সুস্থতায় প্রথমেই মা-বাবার সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। কোনো কিছু খাওয়ার পর বিচি এবং ছোট ব্যাটারি, বোতাম, পুতি, পিন, সুইসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস শিশুর হাতের নাগালে রাখা যাবে না। ফল বা সবজি খাওয়ার পরে বিচিগুলো সঙ্গে সঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
পাঁচ বছরের কম শিশুদের ক্ষেত্রে বিচিজাতীয় কোনো ফল, শক্ত দানাদার খাবার ও চকলেট দেয়া যাবে না। এসব খাবার গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শিশুকে বিচি ছাড়িয়ে শুধু ফল দেয়া যেতে পারে। এছাড়া শিশুকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে অভিভাকদের।