‘নিজেকে কী উত্তম কুমার মনে হয়’ – প্রচলিত এই সংলাপ যার স্টাইল চলা-বলা অভিনয়ের কারণে সৃষ্টি হয়েছিলো, সেই মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪8তম প্রয়াণ দিবস আজ।
বাংলা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে রোমান্টিক, জনপ্রিয় উত্তম-সুচিত্রা জুটি। সময়ের পরিক্রমায় এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়। এখনও আড্ডায় কিংবা আলোচনায় সিনেমা প্রেমিক দর্শকরা উত্তম-সুচিত্রা জুটিকেই সবদিকে এগিয়ে রাখেন।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই কলকাতার টালিগঞ্জে মৃত্যুবরণ করেন এই মহানায়ক। নায়ক অনেক আসবেন কিন্তু মহানায়ক ওই একজনই। চিরবিদায়ের পরও বাংলার মানুষের মনে আজো তিনি মহানায়ক হয়েই বেঁচে আছেন। যতো দিন বাংলা সিনেমা থাকবে তার নাম থাকবে অমর হয়ে।
ভুবন ভোলানো হাসিই ছিল তার অন্যতম পরিচয়। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মেছিলেন বাংলা সিনেমার এই আইকন। আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সিনেমায় এসে হয়ে যান উত্তম কুমার।
উত্তম কুমারের জীবনের শুরুটাও সিনেমাটিক। সংসারের হাল ধরতে শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন। সেখান থেকে মঞ্চে। মঞ্চ থেকে পা রাখেন সিনেমায়। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।
৫০ এর দশকে ‘দৃষ্টিদান’ দিয়ে সিনেমা জীবন শুরু। এরপর প্রথম ছবি ব্যর্থ হলে ‘মায়াডোর’ দিয়ে উত্তম কুমারের শুরু। এরপর ‘বসু পরিবার’ ছবিটি দিয়ে খানিকটা পরিচিতি আসে। ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলেন উত্তম কুমার। এই ছবির মধ্য দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্র পায় তার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা। শুরু হয় উত্তম যুগ। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ আর ‘সাগরিকা’-এর মতো কালজয়ী সব ছবি করে আকাঙ্খিত মুখ হয়ে ওঠেন উত্তম।
একে একে অনেক সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের অভিনেতা তিনি। রোমান্টিক অভিনেতার চূড়ায় অবস্থান করেন উত্তম কুমার। পান মহানায়কের খ্যাতি।
শুধু বাংলা ছবিই নয়, বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন উত্তম কুমার। এর মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ উত্তম কুমারের আরো দু’টি সেরা চলচ্চিত্র। উত্তম কুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের ক্যারিয়ারের ১১০তম ছবি। এই ছবিটি আজো সিনেমাপ্রেমীদের মনে এক অন্যরকম আলোড়ন তৈরি করে।
উত্তম কুমার গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায় মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। একসময় উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন।