অভিষেক ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল করে নতুন ক্লাব ইন্টার মায়ামিকে পূর্ণাঙ্গ পয়েন্ট পাইয়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। যা দেখে মায়ামির মালিক ডেভিড ব্যাকহামকে গ্যালারিতে অশ্রুসিক্ত হতে দেখা যায়। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেছিল মায়ামি। এখানে যথারীতি দ্যুতি ছড়িয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এ তারকা। জোড়া গোল করার পাশাপাশি করিয়েছেন একটি গোলও। পুরো ম্যাচে গোলের জন্য নিয়েছিলেন ৪টি শট। যার একটি ছিল পথভ্রষ্ট।
৭৮ মিনিট খেলে দু’বার ড্রিবল করার সুযোগ পেয়ে সফল শতভাগ। গোল হতে পারত এমন পাস দিয়েছেন ৩টি। ম্যাচে মোট ৫৬টি পাস দিয়েছেন যার মধ্যে ৪৬টিই ছিল নিখুঁত। এই ছিল মায়ামির হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৬ বছর বয়সী বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের পরিসংখ্যান। ম্যাচের এমন পরিসংখ্যানে তার অনেকে বলতেই পারেন, যে মেসি বছরের পর বছর ইউরোপের সেরা প্রতিযোগিতাগুলো মাতিয়েছেন, তার কাছে উত্তর আমেরিকার তুলনামুলক কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবলে এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতই!
কিন্তু মনে রাখতে হবে এখানে বয়সটাও কিন্তু মুখ্য। ক্যারিয়ারে অন্তিম লগনে দাঁড়িয়ে এমন পারফরম্যান্স যে কাউকে ঈর্ষা জাগায়। যেখানে অনেক ফুটবলার ৩০ এ ঝরে যান সেখানে ৩৬ এও এমন ফর্ম ভাবতে বাধ্য করবে আপনাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আজকের ম্যাচটি নিয়ে মেসি দুই ম্যাচ খেললেন, গোলও পেলেন। শুধুই যে গোল পেয়েছেন এমনটিই নয়। মেসি মাঠে নামবেন আর রেকর্ডবুকে তোলপাড় হবে না এমনটি কি কখনো হয়েছে? আজও মেসি মাঠের পাশাপাশি রেকর্ডবইয়ে তোলপাড় করেছেন।
ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘অপটা জ্যাক’ বলছে, আটলান্টার বিপক্ষে গোল করে অফিসিয়াল ম্যাচে এ নিয়ে ১০০ ক্লাবের বিপক্ষে গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন বিশ্বকাপজয়ী। ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘অপটা হাভিয়ের’ জানিয়েছে, মোট ২৩টি দেশের ১০০টি আলাদা ক্লাবের বিপক্ষে গোল করেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল এবং সেখানকার ফুটবলারদের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘সুদাঅ্যানালিটিকস’-এর হিসেবে অফিসিয়াল ম্যাচে ১১৫টি আলাদা আলাদা ক্লাবের মুখোমুখি হয়ে ১৫টি ক্লাবের বিপক্ষেই গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে মেসি। বাকি ১০০টি ক্লাবের বিপক্ষে নিশানাভেদ করেছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী।
আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর সবচেয়ে বেশি ৩৮ গোল করেছেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার বিপক্ষে। অন্তত একটি করে গোল রয়েছে ২৭টি ক্লাবের বিপক্ষে। ২৪টি ক্লাবের বিপক্ষে রয়েছে জোড়া গোল।
এখানেই শেষ নয় মেসির কীর্তি। আটলান্টার বিপক্ষে জোড়া গোলের দেখা পেয়েছেন মেসি ও রবার্ট টেলর। উত্তর আমেরিকান ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘অপটা জ্যাক’ বলছে, মায়ামির ইতিহাসে এই প্রথম এক ম্যাচে দলটির দুজন খেলোয়াড় একাধিক গোলের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় আটলান্টার বিপক্ষে মেসি করা গোল দুটিই ছিল ডান পায়ে। এতে করে অফিসিয়াল ম্যাচে মেসির ডান পায়ে জোড়া গোল দেখা গেল ৮ বছর পর। সবশেষ লা লিগায় ২০১৫ সালে লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে ডান পায়ে জোড়া গোল করেছিলেন মেসি। এই তথ্যও জানিয়েছে ‘অপটা হাভিয়ের’।
ফুটবল ক্যারিয়ারে ইন্টার মায়ামি হলো মেসির তৃতীয় ক্লাব। এর আগে বার্সেলোনা ও পিএসজির হয়ে ৯৮টি আলাদা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৭০৪ গোল করেছিলেন এ তারকা ফুটবলার। মায়ামির হয়ে ২ ম্যাচে ৩ গোলের পাশাপাশি গোলও বানিয়ে দিয়েছেনও। এর আগে লিগস কাপেই ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে মায়ামির হয়ে অভিষেক ম্যাচে ফ্রি কিক থেকে চোখ ধাঁধানো গোল করেছিলেন গত ডিসেম্বরে কাতারে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো এই তারকা।
২০০৫ সালের ১ মে বার্সেলোনার হয়ে অফিসিয়াল ম্যাচে প্রথম গোল করেছিলেন মেসি। প্রতিপক্ষ ছিল আলবাখেট। মেসি যে ১০০ ক্লাবের বিপক্ষে গোল করেছেন, এর মধ্যে স্প্যানিশ ক্লাবই সর্বাধিক। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানাচ্ছে, ৪১টি স্প্যানিশ ক্লাবের বিপক্ষে গোল করেছেন মেসি।