‘সঞ্চয়পত্র আইন’ নামে নতুন আইনের আওতায় আসছে সঞ্চয়পত্র খাত। এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে ১১টি স্কিম। নতুন আইনে গুরুত্ব পাচ্ছেন পেনশনার ও নারী ক্রেতারা। প্রায় ৪৭ বছর পর করা হচ্ছে নতুন এ আইন। ইতোমধ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এসব তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে বর্তমানে বিধিমালার মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা ও মুনাফা প্রদানসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র আইনের ফলে বন্ধ হচ্ছে ‘সমন্বিত সঞ্চয়পত্র নীতিমালা’।
আইন প্রণয়নের আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সঞ্চয়পত্রের জন্য ‘সমন্বিত নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হবে। একটি খসড়া তৈরি করে চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। সেটি চূড়ান্ত করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়।
সূত্র জানায়, সমন্বিত সেই নীতিমালা প্রণয়ন থেকে সরে এসে নতুন আইন প্রণয়নের দিকে হাঁটছে অধিদপ্তর। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র স্কিমের জন্য সমন্বিত নীতিমালার বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নীতিমালার পরিবর্তে নতুন সঞ্চয়পত্র আইন করার কথা জানান। কারণ সঞ্চয়পত্রের কোনো আইন নেই।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালে সঞ্চয়পত্রের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল নীতিমালার আওতায় পরিচালনা হবে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের স্কিম। খসড়া তৈরি করে অনুমোদনের জন্য জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে।
এই নীতিমালা দ্রুত অনুমোদনের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ক্যাশ অ্যান্ড ডেট ম্যানেজমেন্ট’ কমিটি (সিডিএমসি) বৈঠকে তাগাদা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নীতিমালা হচ্ছে না। এখন নতুন আইন হবে।
সঞ্চয়পত্রের নতুন আইন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, জাতীয় সঞ্চয় আইন নিয়ে কাজ চলছে। আইনের খসড়া প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। খসড়া আইন যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়। সঞ্চয়পত্র আইন প্রণয়ন হলে অনেক কিছু সেখানে পরিষ্কার ব্যাখ্যা থাকবে। বর্তমান সঞ্চয়পত্র বিধিমালা থেকে এটি অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সব ধরনের সঞ্চয়পত্র ১৯৭৭ সালের বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালনা হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্টের আওতায় ইস্যু করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ৫ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’, ‘তিন মাস অন্তর’ মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ‘পরিবার’ সঞ্চয়পত্র এবং ‘পেনশনার’ সঞ্চয়পত্র।
সূত্র জানায়, বর্তমানে নারীরা ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। অনেক নারী আয়ের পথে যুক্ত হচ্ছেন। নতুন আইনে এই নারীদের বেশি করে সঞ্চয়পত্রে সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ থাকছে। এছাড়া প্রকৃত সঞ্চয়পত্রের কেনা বিশেষ করে পেনশনারগণ যাতে কিনতে পারে সে সুযোগ থাকছে।
অপরদিকে, করপোরেট গ্রুপ, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধনিরা যাতে এ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারে আইনে এমন শর্ত থাকছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের হিসাবমতে আগামী জুন মাসে সব ধরনের ম্যানুয়ালি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে শতভাগ হচ্ছে অনলাইনভিত্তিক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা ধরনের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতেই এ আইনটি বেশি প্রয়োজন হবে। নতুন আইনে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের গাইডলাইন থাকবে। ইচ্ছা করলেই কেউ বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না।