Thursday, November 21, 2024

জাপানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একদিন -মোহাম্মদ মিকাইল

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫ সপ্তাহ মেয়াদী অন্তর্ভূক্তিমূলক  শিক্ষা (Inclusive Education) বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণ জাপানের টকিওতে আয়োজন করা হয়। প্রথমেই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education) বলতে কি বুঝায় তা বলা দরকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এবং সুরক্ষা আইন-২০১৩ অনুসারে,”অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা” বলতে বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সমান সুযোগ থাকবে এবং কোনো প্রতিষ্ঠান কোন কারণে কোন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভর্তি বাদ দিতে পারবে না। অর্থাৎ সমাজের প্রতিটি শিশুর শিক্ষার সমান সুযোগ থাকবে, কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতার কারনে কোন শিশুকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পৃথিবীব্যাপী সকল শিশুর বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে প্রতি বছর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) নিজেদের অর্থায়ানে এ প্রশিক্ষনের আয়োজন করে যাচ্ছে।

এ বছর এ প্রশিক্ষনে মোট ১৭টি দেশের ১৭ জন প্রশিক্ষণার্থীকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ থেকে আমি এ প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ পাই। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখ জাপানের টোকিওতে পৌঁছাই। এ প্রশিক্ষণে জাপানসহ মোট ১৮টি দেশ তাদের নিজ নিজ দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক  শিক্ষার (Inclusive Education)  অবস্থা তুলে ধরে। এর মাধ্যমে ১৮টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।

এ প্রশিক্ষণের মোট ৪টি ভাগ:

১.বিভিন্ন দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার (Inclusive Education) অবস্থা সম্পর্কে জানা

২. অন্তর্ভুক্তিমূলক  শিক্ষা (Inclusive Education)’র বিষয়ে তত্ত্বগত আলোচনা

৩. সরেজমিনে জাপানের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education) কার্যক্রম পরিদর্শন এবং সর্বশেষে

৪. অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরী করা।   সরেজমিনে জাপানের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education) কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত  ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ জাপানের “টোকিও গাকুগেই বিশ্ববিদ্যালয়” এর অধিভূক্ত কাগানি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। এ বিদ্যালয়টি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষণ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি মূলত Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রথমেই বলে নেই Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশু বলতে আমরা কি বুঝি। Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশু হচ্ছে সেই সব শিশু যাদের মানসিক ক্ষমতা বা কার্যকলাপ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এবং তাদের আইকিউ লেভেল ১৩০ বা তার চেয়ে বেশী।

সাত ধরণের বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুদের Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশু বলা হয়ে থাকে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে:

১. তারা কৌতূহলী এবং অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে

২. তারা কোন কিছু করার জন্য তাদের নিজস্ব পদ্ধতি গ্রহণ করে

৩. তাদের একটি বড় শব্দভাণ্ডার থাকে এবং তারা প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে কথোপকথন পছন্দ করে।

৪. কোন বিষয়ের উপর তাদের মৌলিক ধারণা থাকে

৫. তারা জ্ঞানগতভাবে অগ্রসর এবং তারা নিজে নিজেই নতুন দক্ষতা অর্জনে সক্ষম

৬. তারা তাদের পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল

৭. তাদের দৃঢ় অনুভূতি থাকে।

এসব শিশুরা অন্য সব সাধারণ শিশু থেকে আলাদা হওয়ায় তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যেমনটি অন্ধ, বোবা, বা যারা কানে শোনেনা তাদের মূল ধারার শিক্ষার সাথে অন্তর্ভূক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। যেহেতু এসব Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশুরা মূলধারা থেকে ভিন্ন সেহেতু তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে এ বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। বিদ্যালয়টিতে সকল শিশুই যে Gifted Child বা প্রতিভাধর শিশু তা নয় এখানে সাধারণ শিশুর সাথে এসব শিশুদেরও শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)  কাযর্ক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিভাধর শিশুরদের কিভাবে মূলধারার সাথে শিক্ষা দেয়া হয় তা সরেজমিন দেখানোর জন্যই এ বিদ্যালয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার আগে আমাদের সকলকেই নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ি পোষাক পরিধান করার জন্য বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ি আমরা সকলেই নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী পোষাক পরিধান করে যাই এবং আমাদের দলে একটি রঙিন আবহ তৈরী হয়। শিশুদেরকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল যে আমরা আজ সে বিদ্যালয়ে যাব। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সাথে সাথেই শিশুরা আমাদের দেখে কৌতুহলী হয়ে উঠে এবং তারা আমাদের সাথে মিশতে চেষ্টা করে এবং নানা ধরণের প্রশ্ন করতে থাকে, যেমন আমারা কোন দেশ থেকে এসেছি, আমাদের প্রধান খাবার কী, সে খাবার কীভাবে তৈরী করা হয়, আমাদের নাম কী ইত্যাদি এবং তারাও নিজেদের পরিচয় আমাদের দিতে থাকে।

পরে আমরা ৩য় শ্রেণীর একটি ইংরেজী ক্লাসে প্রবেশ করি। ক্লাসে ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। তাদেরকে আমাদের দেশের মত এক বেঞ্চে ৪/৫ জন করে বসানো হয় নাই। তারা একটি গোল টেবিলে ৪/৫ জন মুখোমুখি হয়ে বসেছে। শিক্ষক ক্লাসে শিশুদের বিভিন্ন জিনিসের নাম এবং বিভিন্ন ধরনের রং এর সাথে পরিচয় করে দিচ্ছেন। শ্রেণি শিক্ষকের হাতে বিভিন্ন জিনিসের ছবি সম্বলিত ছোট ছোট কার্ড ছিল। শিক্ষক শিশুদের একটি একটি করে কার্ড দেখাচ্ছেন আর সবাই একসাথে জিনিসটির নাম বলছে এবং পরে তিনি কার্ডটি বোর্ডে পেস্ট করছেন। এভাবে ৯/১০টি কার্ড পেস্ট করার পর শ্রেণি শিক্ষক শিশুদের চোখ বন্ধ করতে বললেন। শিশুরা চোখ বন্ধ করলে শিক্ষক বোর্ড থেকে ৪টি কার্ড সরিয়ে নিলেন। এর পর কোন কোন কার্ড সরানো হয়েছে শিশুদের বলতে বলেন। শিশুরা একে একে উক্ত ৪টি কার্ডের নাম বলে। এভাবে তিনি শিশুদের মনে রাখার কৌশল শিখিয়েছেন এবং পাশাপাশি  বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখাচ্ছিলেন। প্রত্যেকটি শিশু প্রাণবন্ত এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। এরপর শ্রেণি শিক্ষক শিশুদের বিভিন্ন প্রকার রং এর সাথে পরিচিত করালেন। প্রথমে তিনি তার চোখ বন্ধ করে শিশুদের বললেন আমি এখন লাল রং দেখতে চাই। তোমাদের কাছে যে সব জিনিসপত্র আছে সেখান থেকে লাল রং এর জিনিসটি দেখাও। শিশুরা কেউ তাদের লাল রং এর পেন্সিল, কেউ বা লাল রং এর ছোট স্টেপলার, কেউ বা গ্লু স্টিক এর লাল রং-এর মুখ ইত্যাদি দেখাল। এমনি ভাবে সবুজ, নীল, হলুদ ইত্যাদি রং এর সাথে শিশূদের পরিচয় করনো হল। শ্রেণি কাজের এ অংশটুতেও শিশুরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে এবং তারা এসব নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করল। শ্রেণি কাজের এ দুটি বিষয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ প্রাণবন্ত ছিল। শিশুরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে ক্লাসে অংশগ্রহণ করছিল।

এরপর চতুর্থ শ্রেণীর আইসিটি ক্লাসে যাই। সেখানে গিয়ে আর এক নতুন অভিজ্ঞতা হল। এখানে প্রত্যেকটি শিশুর হাতে ইন্টারনেট কানেকশানসহ একটি করে ট্যাব ছিল। এ ক্লাসের শিক্ষকের নাম হচ্ছে সুজুকি হিদিকি। তিনি  প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নিয়মিত শিক্ষক এবং কিউই বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক নন। এখানে Gifted Child দের পড়ানোর পাশাপাশি তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন কৌশলের উপর বিভিন্ন গবেষণা করা হয় এবং গবেষণালদ্ধ জ্ঞান পরবর্তীতে অন্যান্য বিদ্যালয়ে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক ও স্টাফ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে খণ্ডকালীন কাজ করে।

এবার এই শ্রেণি শিক্ষকের ক্লাস নেয়ার কৌশল নিয়ে একটু আলোচনা করি। শিক্ষক ক্লাসে শিশুদের মোট ৪টি ছবি দেখালেন। প্রথম ছবিটি ছিল একজন ভদ্র মহিলার ছবি, ২য় ছবিটি ছিল কয়েকজন মানুষ নিয়ে অংকিত একটি প্রচ্ছদ, ৩য় টি ছিল বিভিন্ন অনলাইন গেমের ভয়ঙ্কর চরিত্রের ছবি এবং ৪র্থ টি ছিল একজন মহিলার মুখমণ্ডলের ছবি। শ্রেণি শিক্ষক শিশুদের প্রত্যেকটি ছবি দেখিয়ে তাদেরকে ২ মিনিট সময় দিয়ে বললেন তোমরা কোন ছবিটি বেশি পছন্দ কর এবং কেন পছন্দ কর তা তোমাদের ট্যাবে মন্তব্য কর। অর্থাৎ শিশুদের একান্ত নিজের মতামত আহ্বান করলেন এবং কেউ যেন কারো সাথে কোন আলোচনা না করে সে বিষয়টিও শিশুদের মনে করিয়ে দিলেন। শিশুরা এর মধ্যেই কমেন্ট করল। শিক্ষক সেগুলো অনলাইনেই দেখলেন। কমেন্টগুলি ছিল এ রকম যে ছবিটি খুব রঙিন, ছবিটি প্রাণবন্ত, বা ছবির মানুষটির চোখ খুব সুন্দর, ছবিটি ভয়ংকর, ছবিটি বোঝা যায় না, ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড কালো হওয়ায় ছবিটি খুব উজ্জল, ছবিটি ডট দিয়ে তৈরী ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই কোন ছবিটি কার নিকট সবচেয়ে ভাল লেগেছে এবং কেন ভাল লেগেছে তা বর্ণনা করল। এভাবে শিক্ষক শিশুদের সমালোচনামূলক চিন্তভাবনার (Critical Thinking) চর্চা করতে শিখালেন এবং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তৈরীর চর্চা করালেন।

অতঃপর শিক্ষক তাদেরকে এ ৪টি ছবি নিয়ে নিজেদের দলের মধ্যে আলোচন করে কোন ছবিটি তাদের ভাল লেগেছে এবং কেন ভাল লেগেছে তা ঠিক করতে বললেন। শিশুরা তখন প্রায় ৫ মিনিট এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে এবং কোন কোন দল আলোচনা করে হয়ত কোন একটি ছবির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বা একই দলে হয়ত তিন জন একটি ছবি পছন্দ করেছে বা বাকী ৪ জন হয়তো আর একটা পছন্দ করেছে। এভাবে একই দলে ভিন্নতা দেখা গিয়েছে বা কোন কোন দলে ঐকমত্য হয়েছে। সবশেষে ক্লাসের সমাপ্তি টানার সময় শ্রেণি শিক্ষক পুরো শিখন কার্ক্রমের সারসংক্ষেপ আলোচনা করলেন এবং এ থেকে আমরা কি শিখলাম তা আলোচনা করলেন। আলোচনা করার সময়  শিশুরা তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে কোন ধারণা পেয়েছিল  কি না, পেয়ে থাকলে উক্ত বন্ধুর নাম লিখতে বলেন। সবশেষে তিনি বললেন তোমাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে তবে পরষ্পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। অর্থাৎ এ ক্লাসের শ্রেণি শিক্ষক শিশুদের সমালোচনামূলক চিন্তভাবনার (Critical Thinking) মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি করতে শেখালেন এবং ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়টিও হাতে কলমে শেখালেন।

দুপুরের পর শিশুদের পড়ানোর কৌশল নিয়ে সুজুকি সান আমাদেরকে অবহিত করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে অর্ভূক্তিমূলক শিক্ষার কৌশল আলোচনা করতে গিয়ে কিভাবে আইসিটি এবং ট্যাবকে ব্যবহার করা হয় তা আলোচনা করেন। তিনি বলেন আগে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী সামনাসামনি বা মুখোমুখি হয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হত কিন্তৃ এখন তা হয় না। এখন ছাত্র-ছাত্রীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে একটি বড় টেবিলে পাশাপাশি বসে অথবা যে কোন ধরনের অসম বিন্যস্ত হয়ে বসে এবং শিক্ষক শুধু ক্লাসটি পরিচালনা করে থাকেন। তিনি শিশুদের মধ্য থেকেই প্রশ্ন ও উত্তর উভয়ই বের করেন। শিশুরা কখনো এককভাবে বা কখনো পরষ্পরের মধ্যে আলোচনা করে কোন বিষয়ের নেতিবাচক এবং ইতিবাচক উভয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করে এবং  সবশেষে উক্ত বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। যা সকালবেলা একটি ক্লাসে হাতেকলমে আমরা পর্বেক্ষণ করেছি। এ লেখার শুরুতেই আমি সে বিষয়ে আলোকপাত করেছি। শিক্ষক ক্লাসে গল্পের মাধ্যমে না-কি ছবির মাধ্যমে না-কি অন্য কোন উপায়ে শিশুদের শেখাবেন তা প্রথমে শিক্ষক নিজেই চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে গল্প বা ছবি যেভাবেই শিখানো হোক না কেন শিক্ষক তার ক্লাসে শিশুদের সবসময় সক্রিয় রাখেন এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি শিশুদের চিন্তা করতে এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। অন্যের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে শেখান। শিশুদের যদি কোন গল্প পড়াতে চান তাহলে তিনি প্রথমে শিশুদের গল্পটি পড়তে বলেন। এর পর গল্পের চরিত্রগুলোর বিষয়ে তার অনুভুতি কি তা জানতে চান। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের বৈশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন কেন সে বিষয়ে সমালোচনামূলক চিন্তা করতে বলেন। গল্পটির মূল বিষয়বস্তুর উপর মতামত দিতে বলেন। প্রথমে একক মতামত আহবান করেন পরে নিজ নিজ দলে আলোচনা করে মতামত দিতে বলেন এবং দলের আলোচনায় ঐকমত্য হয়েছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করেন এবং কি কারণে ঐকমত্য হল বা হয়নি তা জানতে চান। তবে সবশেষে অন্যের মতামতের উপর শ্রদ্ধা দেখাতে বলেন। সমস্ত কার্যক্রমটি অনলাইনে ট্যাবের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়েছে।

কোন শিশু যদি ক্লাসে পিছিয়ে পড়ে বা দুর্বল থাকে তবে তার জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করেন। সে যদি আলাদা ক্লাসে যেতে না চায় তবে তার জন্য অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেন। কোন ক্লাস করতে না চাইলে তাকে সময় দেয়া হয় এবং তাকে কাউন্সিলিং করা হয়। মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের কোন রকম চাপ দেয়া হয় না। তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রত্যেক শিশুর জন্য আলাদা আলাদা পাঠ পরিকল্পনা ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাকে ইংরেজীতে Individual Education Plan (IEP) বলা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া বা এগিয়ে যাওয়া শিশুদের জন্য আলাদা আলাদা কার্ক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া স্পিকারের মাধ্যমে Artificial Inteligence (AI) ব্যবহার করেও ক্লাস নেয়া হয়। দূর্বল বা লাজুক শিশুদের জন্য ফিনল্যাণ্ডের উদ্ভাবিত ওয়াইজফ্লোর প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়।

মূলত শিশুদের স্বাধীনভাবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমালোচনামূলক চিন্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরী করে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা জানাতে শেখানো হয়। এখানে শিক্ষক কৌশলী ভূমিকার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাকে শাণিত করার লক্ষ্য নিয়ে ক্লাস পরিচালনা করেন। উচ্চ মেধা সম্পন্ন এসব শিশুদের সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে রাষ্ট্র তথা পৃথিবীর যোগ্য নাগরিক হিসাবে তৈরি করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে এ বিদ্যালয়টি যা আমাদের সকলকে মুগ্ধ

মোহাম্মদ মিকাইল, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

 

 

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর