Wednesday, November 27, 2024

রাজধানীতে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন, নিহত ৪

অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর গোপীবাগে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনটির ইঞ্জিন রুম ও ৫টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এসময় দগ্ধ চার যাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। দগ্ধ তিন যাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ট্রেনটি শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে যশোরের বেনাপোল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাত ৯টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুড়ে যাওয়া বগিগুলো থেকে তখনও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থল উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ঘটনার পর পরই সেখানে উপস্থিত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবির সদস্যরা পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ ঘটনায় এক চিকিৎসকসহ তিন দগ্ধ যাত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন ডা. কৌশিক বিশ্বাস (৩৫) ও আসিফ মো. খান (৩০) ও নাফিস আলম (২২)।

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এখন পর্যন্ত তিন জন ভর্তি আছেন। তাদের বার্ন অল্প হলেও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তারা ঝুঁকিমুক্ত নন। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। ঘটনাস্থল থেকে আরও আহত রোগী আসতে পারে বলে ধারণা করছি। আমরা প্রস্তুত আছি চিকিৎসার জন্য।

পুড়ে যাওয়া পাঁচটি বগিই ছিল এসি কার। বগিগুলোর জানালা বন্ধ থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি যে বগিতে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন ওই বগির দুই পাশে দরজার কাছে অনেক আহত মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। তার ধারণা এসি বগি হওয়ায় জানালা খুলতে না পেরে দরজার কাছে হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা আহত হয়েছেন এবং ধোঁয়ায় অনেকে অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ৫টি বগিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এতে পাঁচটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ইঞ্জিন রুমও পুড়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে এক গণমাধ্যমকর্মী জানান, মাইক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। সবার কাছে সহযোগিতা চাইছেন উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিস এবং র‍্যাব কর্মকর্তারা।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনদের খোঁজে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসছেন অনেকে। তাদের মধ্যে শিপু নামে একজন বলেন, আমার বোন ছোট বোন এলিনা রাজবাড়ী থেকে এই ট্রেনে করে ঢাকা আসছিলেন। এখনও তাকে পাওয়া পায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী শাকিল বলেন, রাত সোয়া ৯টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন দেখে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। ঘটনাস্থলে এসে ট্রেনের ভেতর থেকে কয়েকজনকে জানালা দিয়ে নামিয়ে নিয়ে আসি। সব জানালা খোলা ছিল না। কিছু জানালা বন্ধ ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ট্রেনটির কয়েকটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনের খবর পেয়ে ৯টা ২৫ মিনিটে খিলগাঁও, পোস্তগোলা ও আশপাশের ফায়ার স্টেশন থেকে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে।

এদিকে, বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. সাহিদুজ্জামান জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত নভেম্বর মাস থেকে নতুন রুট পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। আজ দুপুরে ১৫৪ জন যাত্রী নিয়ে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে ঢাকার যাত্রী ছিল ৪৯ জন। বাকিরা এর আগের বিভিন্ন স্টেশনে নেমে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে কোনও ভারতীয় নাগরিক ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এর আগে, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে এক নারী ও তার শিশু সন্তানসহ চার যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর