বিশেষ প্রতিবেদক:
প্রধানবিরোধী দল বিএনপিবিহীন অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুই দিন পর ১০ জানুয়ারি নতুন এমপিরা শপথ গ্রহণ করেন। এর পরদিনই গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। যদিও নতুন মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়েছেন আগের মন্ত্রিসভার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অনেকেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। তফসিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম পদত্যাগ করেন।
নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রিসভার তালিকা পর্যালোচনা করে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়েছেন ১৫ জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী। বাদপড়া মন্ত্রীরা হলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
এ ছাড়াও টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। নতুন মন্ত্রিসভায় ইয়াফেস ওসমান জায়গা পেলেও ছিটকে পড়েছেন মোস্তাফা জব্বার। এ ছাড়াও নতুন মন্ত্রিসভায় ডা: সামন্ত লাল সেন টেকনোক্র্যাট কোটায় পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
বাদপড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন- শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা। এ ছাড়া দু’জন উপমন্ত্রী এবার বাদ পড়েছেন। তারা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। অপর দিকে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী পদোন্নতি পেয়ে এবার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকেও ছিটকে পড়েন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি এবং ওই তিনজন নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁইও পাননি। মন্ত্রিসভার বাকি সব সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও তিনজন প্রতিমন্ত্রীর ভরাডুবি হয়। তারা হলেন- বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান। ওই তিনজনের কেউই নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৮ জন ছিলেন। এর মধ্যে পদত্যাগ করা টেকনোক্র্যাট দু’জন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় ৩৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নতুন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পাওয়াদের কেউই উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাননি। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরমধ্যে এনামুল হক শামীম ও হাবিবুন নাহার নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। আর শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবার পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বিদায়ী মন্ত্রিসভার সংখ্যা বিবেচনা করলে আরো ১১ জন নিয়োগ পেতে পারেন। তবে সেটা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। যার ফলে বিদায়ী মন্ত্রিসভার বাদপড়া প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কেউ কেউ ভবিষ্যতে যুক্ত হতে পারেন- এমন সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।