আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে লিজ নেওয়া পুকুর থেকে অনুমতি ছাড়াই ১৬ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ছোট মাছ তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় মাছচাষি ও অন্যরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সরকারি কর্মকর্তারা সটকে পড়েন।
শুক্রবার সকালে উপজেলার ডহরপুরে এ ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ জানান, পুকুরটি খাস। লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ও রাজস্ব বাকি থাকায় বিধিমোতাবেক পুকুর থেকে মাছ তোলা হয়েছে।
আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, ডালম্বা পূর্বপাড়া বেকার সমবায় সমিতি লিমিটেড সরকারি নিয়ম মেনে ডহরপুর গ্রামের খাস খতিয়ানের ৯৪ শতক বেলগাড়ী পুকুর বাংলা ১৪২৮ থেকে ১৪৩০ সালের ৩০ চৈত্র মাস পর্যন্ত তিন বছরের জন্য লিজ নেয়। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু ডহরপুর জামে মসজিদে সহায়তা দিতে পুকুরটিতে এক লাখ ৬০ হাজার পিস পাঙ্গাশ মাছের পোনা ছাড়েন। লিজের মেয়াদ এক মাস থাকলেও ওই সমিতি আবারো লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। গত ৫/৬ মাসে প্রতিটি পোনা পাঙ্গাশ ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ওজনের হয়েছে। যার বাজার মূল্য অন্তত ১৬ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান আরও জানান, অসুস্থ সিরাজুল ইসলাম খান রাজু ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই পুকুর লিজের ডিসিআরসহ সব কাগজপত্র রয়েছে। সরকারের কাছে কোনো বকেয়া নেই। এ অবস্থায় আদমদীঘির এসিল্যান্ড ফিরোজ হোসেন শুক্রবার সকালে উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার, সাতটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পুলিশসহ বেলগাড়ী পুকুর পাড়ে আসেন। তাকে পুকুর লিজ ও অন্যান্য সব কাগজপত্র দেখানোর পরও তিনি (এসিল্যান্ড) লিজ গ্রহীতাকে কোনো নোটিশ বা সতর্ক না করেই বিক্রির জন্য পুকুরে বড় জাল টেনে অপরিণত পাঙ্গাশ মাছ তোলেন। এতে পুকুরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয়ে উঠেন। তারা সড়ক অবরোধের জন্য দাঁড়ালে এসিল্যান্ড ও অন্যরা গাড়ি ঘুরে ছাতিয়ানগ্রাম সড়ক দিয়ে দ্রুত চলে যান।
মিজানুর রহমান জানান, বিক্ষুব্ধ জনগণকে থামাতে গিয়ে তিনি তাদের মারপিটের শিকার হয়েছেন। মাছ তুলে নিয়ে যাওয়ায় মাছের মালিক অন্তত ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর স্ত্রী বগুড়া জেলা পরিষদ সদস্য মঞ্জুয়ারা বেগম ও অন্যরা জানান, ডহরপুর জামে মসজিদের সহযোগিতা করতে পুকুরটিতে তারা পোনা চাষ করেন। লিজের মেয়াদ, সরকার পাওনা পরিশোধ ও অন্যান্য সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও এসিল্যান্ড অন্যায়ভাবে তাদের অপরিপক্ক পাঙ্গাশ মাছ তুলে নিয়ে গেছেন। অথচ এসব ছোট মাছ ধরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি আমাদের নোটিশ বা সময় দিলে মাছগুলো তুলে নিতে পারতাম। তারা কেয়ারটেকার দুলালের কোনো কথাই গ্রাহ্য করেননি।
এ প্রসঙ্গে আদমদীঘি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফিরোজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজস্ব বকেয়া থাকায় বিধিমোতাবেক পুকুর থেকে মাছ তোলা হয়েছে। এসব মাছ বাজারে বিক্রি করে রাজস্ব আদায় করা হবে। এখানে কোনো অন্যায় করা হয়নি।
সূত্র:যুগান্তর