Tuesday, November 26, 2024

অর্থপাচারের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর:ইউনূস সেন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা লোপাট ও মানিলন্ডারিং হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ। তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে ইউনূস সেন্টার।

এ কে এম সাইফুল মজিদ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বক্তব্য দেন। এরপর রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টার গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরে নিজেদের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। যার বিস্তারিত এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।

 

১. গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই। তিনি শুধু একজন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা ছিলেন।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন যে গ্রামীণ ব্যাংকসহ তার সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে তার কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কখনো কোনো অর্থ বা সম্মানী নেননি। তিনি শুধুমাত্র গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালীন সময়ে ব্যাংকের বেতনস্কেল অনুযায়ী বেতন নিয়েছেন।

গ্রামীণ ব্যাংক ব্যতীত তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর ২৮ ধারা অনুসারে গঠিত, যাদের কোনো ধরনের মালিকানা থাকে না। ড. ইউনূস কোনো বোর্ড সদস্য বা গ্রামীণ ব্যাংক এগুলোর মালিক নন। এগুলোর কোনো মালিক নেই। স্পন্সর সদস্যদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কোম্পানিগুলো গঠন করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এই নট ফর প্রফিট কোম্পানিগুলোর কোনোটিরই মালিক নয়

২. পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরানো হয়েছে।

 

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী গঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যাদের পৃথক আইনগত ও হিসাবগত সত্ত্বা রয়েছে। গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির শুরুতে তাদের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনে তাদের বোর্ডে চেয়ারম্যান ও কতিপয় বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা গ্রামীণ ব্যাংকের ছিল।

পরবর্তীতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানি আইনের ২০ ধারা মোতাবেক গ্রামীণ কল্যাণের তৃতীয় অতিরিক্ত সাধারণ সভায় (২০১০ সালের ৮ মে অনুষ্ঠিত) গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ অনুচ্ছেদ ও ৩২ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে তা ২০১১ সালের ২৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া, গ্রামীণ টেলিকমের দ্বিতীয় অতিরিক্ত সাধারণ সভায় (২০১৯ সালের ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত) গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ অনুচ্ছেদ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ধারাগুলো সংশোধন করা হয়।

তাই গ্রামীণ ব্যাংক এখন প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দিতে পারে না। যে সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে রেজুলেশনে পূর্বের মনোনয়ন করা পরিচালকরাও সই করেন।

কোম্পানিগুলোর আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো পক্ষ নয় এবং এগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো মালিকানাও নেই। কোম্পানি আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোম্পানিগুলোর আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন বা সংশোধন হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সব কোম্পানি দুটির চেয়ারম্যান মনোনয়নের কোনো আইনগত এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।

৩. মানি লন্ডারিংয়ের আলামত পেয়েছি। এর মধ্যেও অনেক তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে কাউকে দোষী করছি না।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
গ্রামীণ ব্যাংকে বরাবরের মতো দেশের প্রথিতযশা ও খ্যাতিমান অডিটর রহমান রহমান হক, হোদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কো:, একনাবীন, এ কাশেম অ্যান্ড কোম্পানিকে দিয়ে বার্ষিক অডিট করেছে। তারা কোনো সময় এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে—এমন কোনো মন্তব্য করেনি।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক টিম এবং সরকার গঠিত কমিটি ও কমিশন এ ধরনের কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের শুরু থেকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মকালীন সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড পরিচালিত হয়েছে সমাজের শ্রদ্ধাভাজন ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা, যারা সবাই সরকার নিযুক্ত ছিলেন। তারা হলেন:-

ক. প্রফেসর ইকবাল মাহমুদ, ভাইস চ্যান্সেলর, বুয়েট

খ. ড. মো. কায়সার হোসাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

গ. ড. হারুনুর রশিদ, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি, অর্থ মন্ত্রণালয়

ঘ. ড. আকবর আলী খান, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি, অর্থ মন্ত্রণালয়

ঙ. প্রফেসর রেহমান সোবহান, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

চ. তবারক হোসেন, সেক্রেটারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কাজেই মানি লন্ডারিংয়ের মতো অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীনই শুধু নয়, হাস্যকর এবং মানহানিকরও।

৪. টেলিকম ভবনসহ সবকিছু গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু হলে সেটি আইনগত অপরাধ।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
টেলিকম ভবনসহ সবকিছু গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে করা হয়েছে বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে টেলিকম ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা বা কোনো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়নি।

৫. গ্রামীণ কল্যাণ কীভাবে সৃষ্টি হলো?

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
১৯৯১ সালে টাঙ্গাইলের শাহাজাহানপুর শাখার রত্নপুর গ্রামে ও ঘাটাইল শাখার বনপুর গ্রামে এক বছরব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় মূলত দুটি বিষয় উঠে আসে। যারা পাঁচ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কাজ করছে তাদের ৪৮ শতাংশ দারিদ্রসীমা অতিক্রম করেছে, ২৫ শতাংশ ব্রেকইভেনে এ আছে এবং ২৭ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে রয়ে গেছে। ২৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে রয়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো স্বাস্থ্যগত সমস্যা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তখনই এ সমস্যা সমাধানে গ্রামীণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে রুরাল হেলথ প্রোগ্রামের (আরএইচপি) আওতায় আটটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেন। আরএইচপি সফল হওয়ায় তিনি সামাজিক ব্যবসার তত্ত্বে দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ কল্যাণ সৃষ্টি করেন।

দারিদ্র নিরসনের জন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে উপরোল্লিখিত কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৯৬ সালে কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর ২৮ ধারা মোতাবেক ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামে একটি নট ফর প্রফিট কোম্পানি (লিমিটেড বাই গ্যারান্টি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৯৫ সালের আগ পর্যন্ত ড. ইউনূসের উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন দাতা ও ঋণদানকারী সংস্থা থেকে সফট লোন ও অনুদান গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইএফএডি, এনওআরএডি, কানাডিয়ান সিআইডিএ, সুইডিশ সিআইডিএ, কেএফডাব্লিউ, জিটিজেড ইত্যাদি।

দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রজেক্ট ডকুমেন্টে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ হিসেবে প্রদানের জন্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে যে অর্থ গ্রহণ করবে তার দুই শতাংশ টাকা দিয়ে একটি স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করবে, যার নাম হবে সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ)।

অর্থাৎ, শর্ত মোতাবেক শতকরা দুই শতাংশ হারে দাতা সংস্থাগুলো প্রদত্ত অর্থের ওপর সুদ ধার্য করে তা ব্যাংকের ব্যয় হিসেবে দেখিয়ে এসএএফ সৃষ্টি করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালে এসএএফ নামক তহবিল গঠন করা হয়। দাতা সংস্থাগুলোর শর্ত মোতাবেক সুদ প্রদান বাবদ এসএএফ-এ ৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জমা হয়।

দাতা সংস্থাদের পরামর্শ ছিল, এই ফান্ড থেকে সদস্য ও কর্মীদের নানামুখী কল্যাণের জন্য এই টাকা ব্যয় করতে হবে।

এই এসএএফ ফান্ড থেকে নানামুখী কল্যাণকর কাজ সম্পাদনের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ কল্যাণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক গ্রামীণ ব্যাংক এসএএফ ফান্ড গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর হয়। হস্তান্তরের পর গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৩ সাল পর্যন্ত একইভাবে সুদ প্রদান করে যার ফলে এসএএফ ফান্ডের আকার দাঁড়ায় ৬৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা গ্রামীণ কল্যাণ তার স্বাস্থ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কল্যাণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করে।

পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক কিছু কল্যাণমুখী কর্মসূচি শুরু করে, যা গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ কল্যাণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। এই সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিগুলো হলো:-

ক. গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সন্তানদেরকে প্রদত্ত উচ্চশিক্ষা ঋণে সুদ সহায়তা দেওয়া।

খ. গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সন্তানদের ছাত্র বৃত্তি প্রদান করা।

গ. গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের আপদকালীন তহবিলে ঘাটতি পূরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

ঘ. গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের চিকিৎসা ঋণে সুদ সহায়তা দেওয়া।

ঙ. গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মোটরসাইকেল ও গৃহস্থালি ঋণে সুদ সহায়তা দেওয়া।

উল্লেখ্য যে গ্রামীণ কল্যাণ সৃষ্টির পর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সন্তানদের শিক্ষা ঋণের সুদ সহায়তা বাবদ ২৯২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ভালো ফলাফলের জন্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সের জন্য ৭১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, আপদকালীন তহবিলের (গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মৃত্যুতে তাদের পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য) ঘাটতি পূরণের জন্য ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা সুদ সহায়তায় বাবদ ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গৃহস্থালি সামগ্রী ক্রয় ও মোটরসাইকেল ক্রয়ে সুদ সহায়তা বাবদ ১৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৫৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা গ্রামীণ ব্যাংককে দিয়েছে।

কর্মসূচিগুলো এখনো চলমান আছে। এ ছাড়া, গ্রামীণ কল্যাণ তার অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে গ্রামীণ ক্যালোডোনিয়ান নার্সিং কলেজের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য গৃহীত শিক্ষা ঋণের বিপরীতে সুদ ভর্তুকি দেওয়া ছাড়াও ঋণ গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া, গ্রামীণ কল্যাণ বাংলাদেশে ১৪৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে, যার মাধ্যমে প্রতি বছর সাত লাখেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে।

৬. গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নরওয়েজিয়ান দূতাবাস থেকে এনওআরএডি ফান্ড নামে ১৯ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। এ ছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংকের এসএএফ থেকে ৩০ কোটি টাকা ১১ শতাংশ হারে সুদে ঋণ গ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। উক্ত ঋণ চুক্তির আওতায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়।

১৯৯৭ সালে এসএএফ ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণের নামে ঋণ চুক্তি হয়। গ্রামীণ কল্যাণ থেকে ইক্যুইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৫৩ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ৪২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এই বিনিয়োগে সহায়তা করার জন্য গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ কল্যাণকে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া, পল্লীফোন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৬৮ কোটি টাকা দিয়েছে এবং প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকা দিয়ে আসছে।

যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাই এ বাবদ গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো অর্থ দেওয়ার প্রযোজ্যতা নেই।

৭.গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৪৪৭ কোটি টাকা নিয়েছেন।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
এসএএফ ফান্ড গঠন ও উক্ত ফান্ড দ্বারা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দাতা সংস্থা থেকে প্রদত্ত অর্থের দুই শতাংশ গ্রামীণ কল্যাণকে দেওয়ার ক্ষেত্রে হিসাব সংক্রান্ত বিষয় যুক্তিযুক্ত করার জন্য ৩৪৭ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণের নিজস্ব বুক অব অ্যাকাউন্টসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বাস্তবে কোনো ব্যাংকিং ট্রানজেকশন বা কোনো রকম আর্থিক লেনদেন হয়নি। এই বিষয়টি গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব বইয়ে প্রতিফলিত আছে।

৮. প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খতিয়ান ধ্বংস ও বিলুপ্ত করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল মজিদ।

ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য
গ্রামীণ ব্যাংকে বরাবরের মতো দেশের প্রথিতযশা ও খ্যাতিমান অডিটর রহমান রহমান হক, হোদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কো:, একনাবীন, এ কাশেম অ্যান্ড কোম্পানি বার্ষিক অডিট করেছে। তারা কোনো সময় এই প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া যায়নি বা বিলুপ্ত করা হয়েছে—এমন কোনো মন্তব্য করেনি।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক টিম এবং সরকার গঠিত কমিটি এ ধরনের কোনো নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে অবজারভেশন দেয়নি।

ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে আসার পর গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি এ প্রসঙ্গে কোনো অভিযোগ আনেনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ বছর আগেই গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে আসার সময় তার দায়িত্বভার যথাযথভাবে হস্তান্তর করে এসেছেন।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর