Monday, November 25, 2024

স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাত পোহালেই ঈদ, পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে মাতবে সারাদেশের মানুষ। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। তবে এবারে চাঁনরাত মানে ঈদের আগের দিন অন্যান্যবারের তুলনায় একেবারে ভিন্ন চিত্র রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন আর বাস টার্মিনালগুলোতে। লোকজনের ভিড় নেই। বাড়িতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যানবাহন ধরার কোনো নেই তাড়া। এই উল্টো চিত্রে অনেকটাই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এছাড়া মহাসড়কগুলোতেও নেই কোনো যানজট। ফলে ঈদের আগের দিন কোনো ঝক্কি ছাড়াই ঈদের ছুটি কাটাতে প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ।

জানা গেছে, ঈদযাত্রার শেষ দিন বুধবার (১০ এপ্রিল) ভোর থেকেই যানবাহনের চাপ কমতে থাকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে। এতে ফাঁকা মহাসড়কে স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।

গত কয়েকদিন গাড়ির চাপ থাকলে আজ ভোর থেকে একেবারেই ফাঁকা মহাসড়ক দিয়ে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছেন উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার মানুষ। ভোগান্তি ছাড়া স্বাচ্ছন্দে ঈদযাত্রা করতে পাড়ায় খুশি মনেই বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এবং হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কাজ করছে জেলা পুলিশ। সেইসঙ্গে সিসিটিভির মাধ্যমে পুরো মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর কোথাও কোনো গাড়ি বিকল বা দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত সেটি অপসারণ করা যায় সেজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেস স্পেশাল টিম বলেও জানা তিনি।

এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা- সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিং ও ঢাকা-বরিশাল রুটে নেই কোনো যানজট বা যাত্রী ভোগান্তির কোনো ঘটনা। ফলে এবারের ঈদের আগের দিন আরামে আর আনন্দে বাড়ি ফিরছেন সবাই।

আরও জানা গেছে, রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও কল্যানপুর বাস টার্মিনালে নেই কোনো ভিড়। বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদের ছুটি আগেভাগে শুরু হওয়ায় অনেকেই এর মধ্যে বাড়ি চলে গেছেন। তাই ঈদের আগের দিন তেমন কোনো যাত্রী নেই।

এদিকে ঈদযাত্রার বাড়তি পাওয়া দিনে স্বস্তিতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে দক্ষিণের জেলাগুলোর লঞ্চ। যাত্রীদের চোখেমুখে গ্রামে ফেরার আনন্দ। বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। চাপ থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী হওয়া মাত্রই ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে সব লঞ্চ।

আনন্দ উচ্ছ্বাসে নাড়ির টানে ঘরে ফিরছেন যাত্রীরা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য সেহরির পরপরই ঘাটে চলে আসেন অনেকে। শিডউল বিপর্যয়ের কোনো অভিযোগ এখনও জানাননি যাত্রীরা।

এদিকে, লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না কেউ। সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২৫টি লঞ্চ দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

অন্যদিকে চলতিবছর ঈদযাত্রায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও এ বছর যাত্রীদের সেরকম অভিযোগ নেই। তারপরও প্রতিবছর ঈদের আগের দিন মানুষের চাপে সড়কপথ, রেলপথ কিংবা নৌপথ সবগুলোতে মানুষের গাদাগাদি। তবে এবার দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র।

যেখানে ঈদের আগাম টিকিট ছাড়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় সোনার হরিণখ্যাত ট্রেনের টিকিট, সেখানে ঈদের আগের দিন বুধবার (১০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেনের অর্ধেকেরও বেশি টিকিট অবিক্রীত রযেছে।

এদিকে ঈদযাত্রার শেষ দিন বুধবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে সময়মতো ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপও তেমন নেই। স্বস্তিতেই ঘরে ফিরছে গুটি কয়েক মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে ঘিরে গত কয়েকদিন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল কমলাপুরে রেলস্টেশনে। বিশেষ করে, গত কয়েকদিনে উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। আজ বেশি দূরত্বের যাত্রীদের চাপ কম, কাছাকাছি গন্তব্যের যাত্রীর সংখ্যা রয়েছে মোটামুটি।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ট্রেনে তেমন শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। সময়মতো স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে প্রতিটি ট্রেন। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও এ বছর যাত্রীদের সেরকম অভিযোগ নেই।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেছেন, ট্রেনে কোনো সিডিউল বিপর্যয় নেই। প্রতিটি ট্রেন তার নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী স্টেশন ত্যাগ করছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) চাঁদ দেখা না যাওয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল)। তাই, বুধবার (১০ এপ্রিল) ও শুক্রবারের (১২ এপ্রিল) ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ে। অনলাইন ও কাউন্টার উভয় জায়গায় টিকিট পাওয়া যায়।

যারা গতকাল টিকিট কিনেছেন, তারা আজ ট্রেনে বাড়ি ফিরছেন। ১০ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল শুধু রেগুলার ট্রেনগুলো যাতায়াত করবে। যে ট্রেনের ডে অফ বা সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে, সেগুলো চলবে না।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের অগ্রিম টিকিটে ঈদযাত্রা শুরু করে ঘরমুখো মানুষ। এসব দিনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে পর্যায়ক্রমে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। আবার ১৩ এপ্রিল থেকে ঢাকায় ফেরার যাত্রা শুরু হবে। ৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এসব টিকিট বিক্রি হয়েছে।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর