বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় “মোখা”য় পরিণত হয়েছে। এটি রবিবার (১৪ মে) সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, তবে এর অগ্রভাগ শনিবার রাতেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করবে। মোখার ফলে অতি ভারী বৃষ্টি হবে উপকূলে এবং অন্যান্য স্থানে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশেরও যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এর আগে এসব বন্দরে এক নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।
আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি এখন উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকমুখী। এ অবস্থায় থাকবে কাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। এরপর শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে মোড় নেবে। এভাবে মোড় নেওয়ায় এটি প্রবল এবং পরবর্তী সময়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে এটি রূপান্তরিত হবে। এরপর কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূলের কাছে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে এটি ঠিক কখন আঘাত হানবে। অনেক সময় গতি কমে যায়। কোথায় কখন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো আরও পরে বলা যাবে। তবে এখন কিছু বিষয় অনুমান করছি আমরা।”
অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র মিয়ানমারের সিত্তুই ও কায়েকফু এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। তবে আমরা এতে ঝুঁকিমুক্ত নই। ঘূর্ণিঝড়ের অর্ধেক যেহেতু আমাদের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অংশ দিয়ে যাবে, সেই অংশটায় ব্যাপক বৃষ্টি হবে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে।”
ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ভূমিধসের শঙ্কা
বিভিন্ন গ্লোবাল মডেল বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ ১৪ মে সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও পেছনের অংশ সন্ধ্যা থেকে ১৫ মে সোমবার ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি স্থলভাগে ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। জ্বলোচ্ছাসের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।”
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, “এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি। বাংলাদেশে কক্সবাজার অঞ্চলে কিছু প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এটা টেকনাফের ওপর দিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে যে গতিপথ দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশটা টেকনাফ ছূঁয়ে যাবে। হয়তো টেকনাফের একটু দক্ষিণ দিক অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে।”
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলার পথে ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও শক্তি সঞ্চয় করে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পরিণত হতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। শুক্রবার তা আরও শক্তিশালী হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পেতে পারে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার-মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি এবং আঘাত হানার সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে দেড়শ কিলোমিটারের কাছাকাছি।