রাজনৈতিক বিশ্লেষক : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায় নিয়ে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্টের সুপ্রিমকোর্টর শ্রেষ্ঠত্ব ও দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেআবারো এই রায়ের মাধ্যমে। দেশের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এমনকি সরকারের শীর্ষস্থানীয় পদ যেমন প্রধানমন্ত্রী অপসারণ, ইমরান সরকারের নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে ওই সংসদকে প্রতিষ্ঠিত করা, এবং সে সংসদে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর নেপেথ্য ভুমিকা রয়েছে বলে পাকিস্তানের জনগণ বিশ্বাস করে। আবার এবারে সেনা-শাহবাজ সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেই শুধু মুক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান হবে হিসেবে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে।
আর এই নিয়েই ভেতর ভেতর বরাবরই একটা চাপা গুঞ্জন চলে পাকিস্তানে। সুপ্রিমকোর্টের একমাত্র ক্ষমতা যদি রায় দেওয়া হয় তবে বর্তমান কোর্ট এতটা শক্তিশালী কীভাবে ঘুরেফিরে এই এক প্রশ্ন এখন পাকিস্তানের সর্বত্র ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
২০০৭-২০০৯ সালের আইনজীবী/ বিচারিক আন্দোলন বর্তমান সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতার অনুঘটক বলা যেতে পারে।
পরিবর্তনের সূচক হিসাবে বিচারক: পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের রায়, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদালত শুধু নিষ্ক্রিয় থেকে নিজেদের বিচারকার্য সম্পাদন করছেন না। পাকিস্তানি আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করছেন হাইকোর্ট। এটি রাষ্ট্রের আরেকটি অঙ্গ। একটি সংস্কারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর উপলব্ধি তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
প্রথমত, আইনজীবী বা বিচারক আন্দোলন পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি বিপ্লবী মুহূর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিমকোর্ট রায়গুলোতে জনগণের ইচ্ছার ওপর বারবার নির্ভরতার উদ্দেশ্য হলো বিচারিক সংস্কারে নিজেদের ভূমিকাকে প্রমাণিত করা। তৃতীয়ত, সাবেক বিচারপতি জাওয়াদ এস খাজা অবমাননা আইন ২০১২-এ বিচারিক সংস্কারের ভূমিকা ইতিহাসে ‘স্বাভাবিক’ হতে পারে বলে যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করেন।
২০০৭ সালে ৯ মার্চ এবং ৩ নভেম্বর বিচারপতিদের অসাংবিধানিক অপসারণের বার্তাটি সহজ ছিল। সিদ্ধান্তটির পক্ষে যুক্তি ছিল-নিছক সাংবিধানিক বৈধতা বিচারিক স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে না।
দক্ষ নেতৃত্ব তৎকালীন পাকিস্তান যখন একজন দক্ষ নেতৃত্বের অভাব অনুভব করছিল তখন নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করেন পাকিস্তান হাইকোর্ট। ‘রক্ষক’ হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে আদালতের অবদানকে অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই।
তবে কথা থাকে:
পূর্বে পাকিস্তানের জনগণের মনে প্রচ্ছন্ন ধারণা ছিলো পাকিস্তান বিচার বিভাগ দেশের শক্তিশালী এস্টাবলিশমেন্টের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। সেনাবাহিনী তাদের এজেন্ডাগুলো সুপ্রিমকোর্টকে দিয়ে জায়েজ করে নেয়। সবচেয়ে মালোচনা সুপ্রীম কোর্টের এ জন্য যে ২০১৭ সালে মাত্র ৭০০০ রূপি হিসেব গরমিলের কারণে তৎকালীন সুপ্রীমকোর্ট সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকেকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ রায়ের পেছনে সেনাবাহনীর ভূমিকা ওয়াকিবহাল মহলমাত্রই জানেন। পররর্তীতে নেওয়াজের শাস্তি, নির্বাচনে অযোগ্য অঘোষণা এসবই একই সূত্রে গাঁথা।
এবং সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়েই ইমরান খানের দল পিটিআই সরকার গঠন করে।
অবশ্য কিছুটা স্বাধীনচেতা ইমরানের সাথে ক্ষমারোহনের পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বিশেষ করে আইএসআই প্রধান নিয়োগ নিয়ে ইমরান-সেনাপ্রধান দ্বন্দ্ব পরকাশ্যে আসে। এরপর শিরু হয় ইমরান -সেনাবাহিনী দ্বন্দ্ব। ইমরানকে হঠাতে সব বরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়। দৃশ্যপটে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে বিপর্জয়ের জন্য মার্কিন প্রশাডন আগে থেকেই ইমরানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো। আমেরিকা- সেনাবাহিনী চেয়েছে ইমরান সরকারের পতন। আদতে তাই হয়েছে।
অবশ্য ইমরান সংসদ মোকাবিলা না করে তড়িঘড়ি করে সংসদ বাতিল করেছেন: যা তার জন্য বুমেরাং হয়েছে। এবং তার সরকারের পতন হয়েছে।
ইমরান ফিরে গেছেন জনতার কাছে: প্রধানমত্রী পদ হারয়ে ইমরান সারা দেশে কর্মী-সমর্থদের নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এক পর্যায়ে দেচের নড় একটি জনগোষ্ঠী বিশ্বাশ করে যড়য়ন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার বাধ্য হয়েছেন। এর ফলস্বরূপ স্থামীয় নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনগলোতে ইমরানের দল বিপুল বিজয় অর্জন করে। ইমরান সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।