লক্ষ্যটা মোটেই সহজ ছিল না। জিততে হলে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হতো ৩১৯ রান। তার ওপর শুরুতেই নেই জোড়া উইকেট। এমন কঠিন অবস্থায় যখন বাংলাদেশের আকাশে ধরা দেয় শঙ্কার মেঘ। তখনই পাখা মেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। সঙ্গে ভূমিকা রাখেন তাওহিদ-মুশফিক। ব্যাটারদের দৃঢ়তায় রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জয়ের হাসি হাসল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে বৃষ্টির বাগড়া ভেস্তে যায় প্রথম ওয়ানডে। ফলে দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।
গতকাল শুক্রবার (১২ মে) ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নির্ধারিত ৪৫ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আয়ারল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ৩ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ। ৪৪.৩ ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক।
বাংলাদেশের জয়ের পথে ভিত গড়ে দেন শান্ত। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে গড়া তাঁর ১৩১ রানের জুটিতেই মূলত ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আর শেষ দিকে ভূমিকা রাখেন মুশফিকুর রহিম। যাতে ভর করে শেষ পর্যন্ত জয়ের নাগাল পায় সফরকারীরা। দলের হয়ে ৯৩ বলে ১১৭ রানের ইনিংস উপহার দেন শান্ত। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২টি বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায়। তাওহিদ উপহার দেন ৫৮ বলে ৬৮ রানের আরেকটি চমৎকার ইনিংস।
নয়ত রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়ংকর। দলীয় ৯ রানেই ওপেনার তামিমকে হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারের পায়ের ওপরে করা ডেলিভারি ফ্লিক করেন তামিম। বল চলে যায় সোজা ফরোয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো জর্জ ডকরেলের হাতে। ১৩ বলে ৭ রান করেন অধিনায়ক।
এরপর আলগা শট খেলতে গিয়ে বিদায় নেন লিটন দাস। ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২ চার ও ১ ছয়ে ২১ বলে ২১ রান করেন এই ওপেনার। জোড়া উইকেট হারানোর চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে থিতু হওয়া ওই জুটি ভেঙে স্বস্তিতে ফেরে আয়ারল্যান্ড। ২৭ বলে ২৬ রান করে সাকিবও ক্যাচ তুলে দেন ডকরেলের হাতে।
এরপরই শান্ত-তাওহিদের চমৎকার জুটি পায় বাংলাদেশ। দুজন মিলে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান। দলে স্বস্তি ফেরানো এই জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙে ৩৪তম ওভারে। এবার ডকরেলের বলেই ৬৮ রানে বিদায় নেন তাওহিদ। এর মাঝে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শান্ত। ৮৩ বলে ১১ চার ও ২ ছয়ে শতক স্পর্শ করেন তিনি। তবে সেঞ্চুরির পর ১১৭ রানে ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ। এরপর বাকি কাজ সারেন মুশফিকুর রহিম। শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। দলের জয়ের পথে ২৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তাইজুল করেন ১৩ বলে ৯ রান।
প্রথম ওয়ানডের মতো আজকের ম্যাচটিতেও বাধা দেয় বৃষ্টি। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে প্রায় ২ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় খেলা। তখন আগে ব্যাট করতে নামে আইরিশরা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার পল স্টার্লিংয়ে উইকেট।
হাসান মাহমুদের পঞ্চম বল মিড অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে যান পল স্টার্লিং। স্ট্যাম্প করিডোরের বলটি ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়ে। যদিও আম্পায়ার শুরুতে আউট দেয়নি। তামিমের নেওয়া রিভিউতে দেখা যায় বল স্টার্লিয়ের ব্যাটে লেগেছে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আউট দেন আম্পায়ারা। রানের খাতা খেলার আগেই সাজঘরে ফিরতে হয় স্টালিংকে।
তার বিদায়ের পর আরেক ওপেনার স্টিফেন দোহেনিকে নিয়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি। যদিও তাদের সেই চেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো আইরিশ শিবিরে আঘাত হানেন হাসান। দলীয় ১৬ রানে তার করা ব্যাক অফ লেন্থের ডেলিভারিতে গালিতে কাট করতে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দোহেনি।
দ্রুত জোড়া উইকেট নিয়ে আইরিশদের অল্প রানের ব্যবধানে গুটিয়ে ফেলার ছক কষলেও, সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় বালবার্নি ও হ্যারি টেক্টরের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। চাপ সামাল দিয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন এই দুই ব্যাটার। গড়ে তোলেন ৯৮ রানের জুটি।
অবশেষে দলীয় ১১৪ রানে শরিফুলের করা ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বালবার্নি। আউট হওয়ার আগে করেন ৫৭ বলে ৪২ রানের ইনিংস। তার বিদায়ের পর দ্রুতই আরও ২ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। দলীয় ১৩৮ রানে লোরকান ট্রাকার ও ১৬৭ রানে কার্টিস ক্যাম্ফারের উইকেট হারায় আইরিশরা। এবার বাংলাদেশের হয়ে ত্রাতার ভূমিকায় শরিফুল ও তাইজুল।
১৬৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা আয়ারল্যান্ডকে চেপে ধরতে চেয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা। তবে তা হতে দেয়নি হ্যারি টেক্টর ও জর্জ ডকরেল। এই দুই ব্যাটার ফের বড় জুটি গড়ে বাংলাদেশকে উল্টো চাপে ফেলে। মাঝে ৯৩ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন নেন টেক্টর।
সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর বাংলাদেশের বোলারদের পাত্তা না দিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকে টেক্টর। তার সঙ্গে যোগ দেয় ডকরেলও। এই দুইজনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শেষশেষ ৬ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩১৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আয়ারল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম। তবে কমবেশি সবাই রান বিলিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড : ৪৫ ওভারে ৩১৯/৬ ( দোহেনি ১২, স্টার্লিং ০, বালবার্নি ৪২, টেক্টর ১৪০, ট্রাকার ১৬, ক্যাম্ফার ৮, ডকরেল ৭৪*, অ্যাডায়ার ১৯*; হাসান ৯-০-৪৮-২, শরিফুল ৯-০-৮৩-২, এবাদত ৯-১-৫৬-১, সাকিব ৯-০-৫৭-০, তাইজুল ৭-০-৫৯-১. মিরাজ ২-০-১৩-০)।
বাংলাদেশ : ৪৪.৩ ওভারে ৩২০/৭ (তামিম ৭, লিটন ২১, শান্ত ১১৭, সাকিব ২৬, তাওহিদ ৬৮, মুশফিক ৩৬, মিরাজ ১৯, তাইজুল ৯, শরিফুল ৪; লিটল ৯-০-৬৪-১, অ্যাডায়ার ৮.৩-১-৫২-১, হিউম ৬-০-৫৭-১, ম্যাকব্রেইন ৭-০-৪৯-০, ডলরেল ৯-০-৫৮-২, কার্টিস ৫-০-৩৭-২)।
ফল ৩ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।