পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি স্থায়ী সমস্যা আমাদের রয়েছে। এটির উন্নতি হচ্ছে, তবে এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা যেতে পারিনি, অনেক গ্যাপ আছে। দ্বিতীয়ত মূল্যস্ফীতি, এই দুটিই মূল চ্যালেঞ্জ। এগুলো আরও কিছুদিন থাকবে। তবে এগুলো অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে খুব সচেতন।
সোমবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে আরটিভির ‘বাজেটে প্রত্যাশা, ২০২৩-২৪’ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া বিদ্যুৎঘাটতির প্রেক্ষিতে সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকারের যাওয়া উচিত। বিজিএমইএর সভাপতি বললেন, গার্মেন্ট খাতে অর্ডার কমছে। গত কয়েকবছরের মধ্যে এই কথাটি প্রথম শুনলাম। কেন অর্ডার কমছে, কীভাবে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কারণ আমাদের বৈদেশি মূদ্রা আয়ের এটিই সবচেয়ে বড় খাত। এ ছাড়া রিসাইকেলিংয়ের যে বিষয়টি উঠে এসেছে, এ ধরনের কাজে অবশ্যই উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অগ্রিম কর এবং অগ্রিম ভ্যাট নিয়ে অনেক সমস্যা আছে, এগুলো সমাধান করা খুবই দরকার। পাশাপাশি এসএমই খাতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতে নারীরা সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমাদের এই খাতের উদ্যেক্তাদের আরও উৎসাহ দিতে হবে।
বাজেটে ভর্তুকির বিষয়ে এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন। তিনি চাচ্ছেন, ভর্তুকি আখেরে ভালো নয়। তবে দুই ধরনের ভর্তুকি আছে, ভালো ভর্তুকি এবং খারাপ ভর্তুকি। যেমন কৃষি খাতে ভর্তুকি দেওয়া ভালো। সারা পৃথিবীর দুয়ার যদি বন্ধ হয়ে যায় অন্তত ঘরে যদি চাল থাকে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলছেন, কৃষিখাতে ভর্তুকি আমরা দিতে থাকবই। অন্য কিছু কিছু ভর্তুকি আছে যেগুলোকে জাস্টিফাই করা কষ্ট হয়। যেটা ভুল জায়গায় যায়, তেলা মাথায় তেল যাওয়ার মত। এটি যাতে না হয়, সেটি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, সরিষার তেলের পাশাপাশি চিনির উৎপাদন বাড়াতে হবে। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না। তবে আমরা আদায়ের জন্য বার বার একই মুরগিকে আঘাত করব না, এটা গ্রহণযোগ্য না। আমরা চাই নিত্যনতুন এড়িয়াতে যাওয়ার জন্য।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন- কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমান, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমই’র সভাপতি ফারুক হাসান, বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম, এমসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি মানতাসা আহমেদ, বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. তানভীর, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা। একই সঙ্গে ব্রেজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান, রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু, বরিশাল চেম্বারের সভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু, সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাঈদুর রহমান রেনু অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আলোচকরা বাজেট নিয়ে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে বসা বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, উদ্যোক্তা, সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাংবাদিক প্রতিনিধিসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচকদের নানান প্রশ্ন করেন এবং নিজেদের মতামত দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন। টেলিভিশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানটি একযোগে আরটিভির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন মো. বেলায়েত হোসেন।