রাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের কারণে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ আছে প্রায় এক যুগ ধরে। সে কারণেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের লড়াই খুব একটা দেখার সুযোগ মেলে না ক্রিকেট ভক্তদের। একমাত্র আইসিসি ইভেন্টই ভরসা দুই দেশের দ্বৈরথ দেখার। তবে এবার আইসিসির টুর্নামেন্টেও দুই দলের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আসন্ন সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে অংশগ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিল ভারত। কূটনৈতিক বৈরিতার কারণে তারা পাকিস্তানে যেতে রাজি নয়। তার পরিবর্তে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা বলে ভারত। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় পাকিস্তানও। পিসিবি পাল্টা প্রস্তাব দেয় ভারতের ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেখে বাকি ম্যাচগুলো নিজেদের মাঠে আয়োজন করার। তবে গরমের অজুহাত দেখিয়ে এমন ভ্রমণ সূচিতে রাজি নয় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
এদিকে,ভারত যেমন এশিয়া কাপ নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়, অন্যদিকে পাকিস্তানও বিশ্বকাপ না খেলার হুমকি দিয়েই চলেছে। তারাও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে নিজেদের ম্যাচ খেলতে চায়। এছাড়া পাকিস্তানের তরফে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর ভেন্যু নিয়েও অসন্তোষ জানানো হয়। আগে থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, পাক-ভারত মহারণের জন্য আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকেই বেছে নিতে চায় ভারতীয় বোর্ড। কেননা, লাখের বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই মাঠে সংস্থাটি এই ম্যাচের অধিক মুনাফা তুলতে চায়। এছাড়া দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হচ্ছে রোববার। ভারতের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। এখানেই ঠিক আপত্তি পাকিস্তানের।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি বলেছিলেন, যখন শুনলাম পাকিস্তানের ম্যাচ আহমেদাবাদে হতে পারে, আমি হাসলাম এবং নিজেকেই বললাম, ভারতে না যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে এটা। তার পরিবর্তে যদি চেন্নাই বা কলকাতার কথা বলা হতো সেটিও একটা কথা ছিল।
পাক-ভারত রশি টানাটানির মধ্যে নতুন করে হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি। এশিয়া কাপ আয়োজনের স্বত্ব হারালে ভারতে এ বছর অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে পাকিস্তান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন পিসিবি প্রধান।
তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) সব ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে চায়। আমাদের জন্য বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে যেতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বিসিসিআইয়ের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ভারতের এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়, যে কারণে আমাদের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ বয়কট করতে হয় এবং ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করতে হয়। তাতে খুবই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে।’
ভারত যদি এশিয়া কাপ নিয়ে পিসিবির ‘হাইব্রিড মডেল’ মেনে নেয়, তাহলে বিশ্বকাপেও পাকিস্তানকে একই মডেলে খেলানোর দাবি জানিয়েছেন নাজাম শেঠি, ‘ভারত দলের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদেরও দুশ্চিন্তা আছে। তাই পাকিস্তানকে বাংলাদেশ, আরব আমিরাত কিংবা শ্রীলঙ্কায় খেলতে দেওয়া হোক। এখন এটাই সমাধান, যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে কিংবা বাইরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে রাজি হয়।’
সর্বশেষ চলমান জটিলতা নিরসনে আইসিসির কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানিয়ে রাখলেন পিসিবি প্রধান।