ভারতে বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় একজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের আকোলা শহরে শনিবার ও রোববার ধরে চলা সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, সহিংসতায় আহতদের মধ্যে একজন নারী কনস্টেবল আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে এবং আকোলায় কারফিউ জারি করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার এক সম্প্রদায়ের একজন সদস্য ‘কেরালা স্টোরি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা একটি পোস্ট নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আকোলা পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে অবস্থান নেয়ার পর প্রথম সহিংসতা শুরু হয়।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, ওই পোস্টটি ছিল শহরটির দুই বাসিন্দারা মধ্যে কথোপকথনের স্ক্রিনশট, এদের একজন সেটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছিলেন।
এক পুলিশ কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ওই কথোপকথনের কিছু বক্তব্য অপর ব্যক্তির ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছিল’; তবে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের দফতর শান্তির আহ্বান জানিয়েছে এবং সহিংসতার সাথে যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজ্য পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে সিনেমা হলে আসা কেরালা স্টোরি মুক্তির কয়েক মাস আগে থেকেই বিতর্কের কারণ হয়েছিল। চলচ্চিত্রটিতে ভারতের কেরালা রাজ্যের তিন নারীর মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রবাদী গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়ার কাল্পনিক কাহিনী প্রদর্শিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সিনেমাটির কাহিনী অতিরঞ্জিত।
চলচ্চিত্রটিকে ‘প্রপাগান্ডা’ অখ্যায়িত করে এর সমালোচনা করেছে ভারতের বিরোধীদলগুলো। কিন্তু নির্মাতাদের দাবি কয়েক বছরের গবেষণা ও সত্যি কিছু ঘটনার অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দেশটির দুইজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ চলচ্চিত্রটি ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থন পেয়েছে। চলতি মাসে কর্ণাটকে এক নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর প্রশংসা করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যে চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করেছে। যে রাজ্যের কাহিনী, সেই কেরালাতেও এই চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ হয়েছে। কেরালার প্রতিবেশী তামিলনাড়ু রাজ্যেও এটি নিষিদ্ধ হয়েছে।
কিন্তু একই সময় বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকার চলচ্চিত্রটিকে তাদের রাজ্যে করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।
রোববার জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু জেলার একটি মেডিক্যাল কলেজে চলচ্চিত্রটিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সহিংসতায় অন্তত দুই শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চলচ্চিত্রটি নিয়ে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এসব অস্থিরতার জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করে কেন্দ্রীয় সরকার ‘চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাবানল’ ছড়াতে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।