গরম মানেই ত্বকের বেহাল দশা। রোদে বের হতেই হয়। আর তারপরই সমস্যা শুরু হয়। কালো ছোপ, ব্রণ থেকে শুরু করে তেলতেলে ভাব সারাক্ষণ অস্বস্তিতে রাখে। গরমে ত্বককে সতেজ ও দাগহীন রাখতে নিতে হবে বিশেষ বন্দোবস্ত। নামীদামি প্রসাধনীর দরকার নেই, চেনা কিছু ঘরোয়া উপকরণেই দূর হবে ত্বকের অধিকাংশ সমস্যা
ভিটামিন সি
শরীর কিংবা ত্বক ভিটামিন সি যত্ন নেয় উভয়েরই। বিশেষ করে যাদের ত্বকে বলিরেখা, মেচেতা, ব্রণ, কালো দাগছোপের মতো সমস্যা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাজারচলতি প্রসাধনীর চাইতে ভিটামিন সি বেশি উপকারী হবে। ভিটামিন সি ব্যবহারের সঠিক সময় হল সকাল। ঘুম থেকে উঠেই ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ছাড়াও কিউয়ি, লেবু, স্ট্রবেরির মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল বেশি করে খান।
কফি
ত্বকের যত্নের ঘরোয়া টোটকা হিসাবে কফি অন্যতম বিকল্প হতে পারে। কফি দিয়ে তৈরি ফেস প্যাক ব্যবহার করেন অনেকেই। কারণ এটি সত্যিই কার্যকর। ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে কফি দারুণ ভূমিক পালন করে। চোখের নীচের কালচে দাগও কফির গুণে উধাও হয়ে যায়। কফি ত্বক নরম রাখে। মসৃণ করে তোলে।
অলিভ অয়েল
ওজন নিয়ন্ত্রণে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ত্বকের যত্নেও অলিভ অয়েল কম উপকারী নয়। ত্বকের প্রতিটি কোষ সচল রাখতে অলিভ অয়েল সত্যিই ভীষণ উপকারী। অনেকেই ব্রণ হওয়ার ভয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন না। সেই ধারণা মুছে ফেলে ত্বকের খেয়াল রাখতে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন এই তেল।
টক দই
টক দই খুব সহজ প্রাপ্য উপাদান। ত্বকের যত্নে এটিকে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, টক দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলো ত্বকের যত্নে খুব ভালো কার্যকরী। আসলে এর মধ্যে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বক উজ্জ্বল করে ও অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে বেসন নিন। তাতে মেশান দই। ভালো করে মিশিয়ে প্যাক বানান। তা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঘষে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ব্যবহার করুন। দাগ দূর হবে, সতেজ থাকবে ত্বক। শুধু ঘামলে রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে নেবেন।
হলুদ
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ, হলুদ মুখের ব্রণ এবং ব্রণর মতো ত্বক সম্পর্কিত আরও অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমের এই মৌসুমে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মুখে হলুদ লাগালে তা রোদ দূর করে ত্বকের উন্নতি ঘটায়। হলুদের টুকরো বেটে নিন। এবার তার সঙ্গে মেশান মধু। ভালো করে মিশিয়ে প্যাক বানান। তা মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঘষে ধুয়ে নিন। মিলবে উপকার। উপকার। সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করুন।
মুলতানি মাটি
মুখে সূর্যের পোড়া দাগ বা পিগমেনটেশন দূর করতেও মুলতানি মাটি সমানভাবে কার্যকরী। আমন্ড অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগান। এটি ত্বকের পিগমেনটেশন দূর করার সাথে সাথে ত্বক নরম করতেও সাহায্য করে। মুলতানি মাটি স্ক্রাব হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া মুলতানি মাটি নিয়ে তাতে গোলাপ জল দিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। তা মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে নিন। মিলবে উপকার। ত্বক হবে নরম, সঙ্গে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে। সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন ব্যবহার করুন।
তুলসি পাতা
তুলসিতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। যা আপনার ত্বকের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, আপনার ত্বকের প্রদাহ কমাতে বা জ্বালাভাব কমাতে এই তুলসি বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি ত্বকের যত্নে তুলসিকে ব্যবহার করতেই পারেন। ত্বকে থাকবে না দাগছোপ, মাত্র ৭ দিনে ফিরে পাবেন মুখের জেল্লা। একটি পাত্রে পানি গরম করুন। এতে তুলসি পাতা ফেলে ফুটিয়ে নিন। ফুট গেলে তা ছেঁকে নিন। এবার তা তুলোয় করে মুখে লাগান। যাদের ত্বকে ব্রণর সমস্যা আছে কিংবা যাদের ত্বক অধিক তৈলাক্ত তাঁরা নিয়মিত ব্যবহার করুন এই টোনার। মিলবে দারুণ উপকার। সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যবহার করুন।
দুধ-পাতিলেবুর রস
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হয়ে কাজ করে। যা ত্বককে বুড়িয়ে যেতে দেয় না। সঙ্গে লেবুর রসে থাকা অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেবুতে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান দাগ দূর করে। ত্বকে ট্যান থাকলে তা দূর করতেও সাহায্য করে। একটি পাত্রে দুধ নিয়ে তাতে পাতিলেবুর রস মেশান। এবার মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে নিন। মিলবে উপকার। ট্যান দূর হওয়ার সঙ্গে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ব্যবহার করতে হবে।
অ্যালোভেরা
ত্বকের দেখাশোনায় অ্যালো ভেরা যে ঠিক কতটা উপকারী, তা অনেকেরই জানা। ত্বকের উন্মুক্ত রোমকূপ ভরাট করতে অ্যালো ভেরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও একজ়িমা, ট্যান, বলিরেখার মতো সমস্যার সমাধান লুকিয়ে অ্যালো ভেরাতে। অকালবার্ধক্য রোধেও অ্যালো ভেরা ব্যবহার করা যায়।