ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাসকে ঘিরে আমাদের বর্ষাকাল। রিমঝিম বৃষ্টি, একরাশ সজীবতা আর কদমফুলের সুবাস নিয়ে হাজির হয় বর্ষাকাল। বর্ষাকালে আকাশ থাকে গুরুগম্ভীর কালো মেঘের ভারে নিরন্তর অবনত। সগর্জন, মেঘবর্ষণের বিপুল দাপট চলে এ দুই মাসে। কিন্তু এই সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় আশপাশ।
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাই কিন্তু জীবন-যাপনের প্রথম শর্ত। কিন্তু বাড়ি ঝকঝকে তকতকে থাকলেই যে সুগন্ধে ম-ম করবে, এমন কোনো গ্যারান্টি কিন্তু নেই। আর যদি বৃষ্টি বাদল দিন হয়। তাহলে তো জীবন-যাপন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবেই। যারা একটু পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বাড়তি বিড়ম্বনা যোগ হয় এই মাসটাতে।
বৃষ্টির দিনগুলোতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ঘরবাড়ি, জামা-কাপড় ও আসবাবপত্রে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা ভাব। এছাড়াও রয়েছে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব। সবকিছুতেই যেন একটা মনমরা ভাব এসে জেঁকে বসে।
রোদ, বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে পরিবেশ হয়ে উঠেছে স্যাঁতসেঁতে। ঘরবাড়ি, জামা-কাপড়, আসবাবপত্রেও থাকছে একটা ভেজা ভাব। তাছাড়া পোকা-মাকড়ের উপদ্রব তো আছেই। আবার একটা বাজে গন্ধ যেন ছড়িয়ে থাকে সব জায়গাতেই। এই স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করে ঘরকে সুবাসিত করে তোলা খুব কঠিন নয়। চাইলে খুব সহজে এই বর্ষায় গৃহস্থলিতে ভালো থাকা সম্ভব।
আর যেকোনো রকম দুর্গন্ধ নিয়ে নিত্যদিন আমরা অস্থির হই। বর্ষা মওসুমে এই সমস্যা তো আরো বেড়ে যায়। চার পাশের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ঘরেও অনুভব হয়। অথচ বেশ সহজ উপায়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
✪ বৃষ্টির সময় জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হবে, যাতে ঘরের ভেতর পানি বা আদ্রতা ঢুঁকে না যায়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মেঝে মুছে নিতে হবে। অল্প সময়ে ঝকঝকে শুকনা ঘর পেতে ঘর মোছার বিকল্প নেই।
✪ প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ঘরের সব জানালা খুলে দিন। রোদ, হাওয়া ঘরের জীবাণু দূর করে সতেজতা বজায় রাখুন।
✪ গদি, বালিশ, কুশনে ধুলা জমে খারাপ গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই মাঝে মধ্যে রোদে দিয়ে ঝেড়ে নিন।
✪ সুগন্ধি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ফ্লোর ক্লিনার পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন। ঘরের কোণ, জানালার ওপর বা দরজার পেছনের অংশগুলোও মুছতে ভুলবেন না।
✪ টাটকা সুগন্ধি ফুল ঘরে রাখুন। তবে ফুলদানির পানি প্রতিদিনই বদলাতে হবে।
✪ চন্দন গুঁড়ার সঙ্গে অল্প শুকনো নিমপাতা মিশিয়ে আলমারিতে রেখে দিন। সুগন্ধ ছড়াবে ও পোকামাকড়ও দূর হবে।
✪ কার্পেট, পর্দা, সোফা প্রতিদিন ভ্যাকুয়াম ক্লিন করতে পারলে ভালো। সময় না থাকলে সপ্তাহে দুই দিন ভালোভাবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে অন্যান্য দিন অল্প ডাস্টিং করলেও চলবে। পাশাপাশি বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে বদলে ফেলুন।
✪ পুরোনো কাঠের আসবাবে খুব সহজে আর্দ্রতা ধরে। এরপর এতে ধুলা জমে খারাপ গন্ধ হয়। সেক্ষেত্রে বাড়ির যে অংশ শুকনো ও আলো হাওয়া পর্যাপ্ত আসে, সেখানেই এ ধরনের জিনিস রাখুন। যদি সম্ভব হয় মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ রোদে রাখুন এই আসবাবপত্রগুলো।
✪ চট করে ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ কাটাতে অ্যারোমা মোমবাতি ও ধূপকাঠির জুড়ি নেই। বাজারে নানা রকম রুম ফ্রেশনার, অ্যারোমা স্টিক পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করুন।
✪ বৈদ্যুতিক বাল্বগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে ঝেড়ে, তারপর সাবানে ভেজানো পানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেগুলো দিয়ে মুছে নিন।
✪ আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে কর্পূর রাখুন। গন্ধ চলে যাবে। জামা-কাপড়ের স্যাঁতসেঁতেভাব দূর করার জন্য আলমারিতে একটি চকের টুকরা রেখে দিন। জামা-কাপড়ের স্যাঁতসেঁতেভাব চলে যাবে নিমিষে।
✪ মাঝে মধ্যে জামা-কাপড়, লেপ-তোশক, কার্পেট, বালিশ রোদে দিন। জামা-কাপড় স্তুপ করে রাখবেন না। ভেজা জামা-কাপড় রোদে কিংবা বাতাসে শুকিয়ে নিন। এগুলো থেকেও দুর্গন্ধ হয় ঘরে।
✪ বিছানার তোশকের নিচে বকুল ফুলের মালা রাখতে পারেন। এতে সুন্দর গন্ধ হবে আর ছারপোকাও হবে না।
✪ পরিস্কার থাকা সত্ত্বেও রান্নাঘরে দুর্গন্ধ হলে অল্প দারচিনি, এলাচ ও তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। ফুটে গেলে আঁচ হালকা করে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখুন। যাতে তার ভাপ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
✪ ঘরে মাছের গন্ধ দূর করতে অল্প অলিভ অয়েলের মধ্যে এক টুকরো দারচিনি দিয়ে কিছুক্ষণ গ্যাসে বসিয়ে রাখুন।
✪ সিংকের খোলা মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে এক কাপ ভিনেগার ও বেকিং সোডা মিশিয়ে ঢেলে দিন। আধা ঘণ্টা রেখে গরম পানি ঢেলে দিলে গন্ধ উধাও।
✪ হাওয়ায় থাকা টক্সিন থেকে বাথরুমে খুব দুর্গন্ধ হয়। এক কোনায় ইনডোর গাছ রাখুন। এগুলো বাতাস থেকে অতিরিক্ত টক্সিন শুষে নেয়।
✪ বাথরুম মানেই সবসময় ভেজা থাকবে তা কিন্তু নয়। এ ঘরটিও শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। শাওয়ার কার্টেন ও পাপোশ ব্যবহার করুন। তাহলে ডাম্প থেকে বাজে গন্ধ হবে না। বাথরুমে এয়ারফ্রেশনার ব্যবহার করুন। চটজলদি বাথরুমের গন্ধ দুর হবে।
✪ বর্ষা এলে ঘরে মজুদ রাখা চাল, ডাল ও আটাতে পোকার উপদ্রব দেখা দেয়। তাই এসব খাদ্যদ্রব্য রাখার পাত্রে কয়েকটি শুকনা নিমপাতা রেখে দিলে আর পোকার উপদ্রব হবে না।
✪ বর্ষা মৌসুমে বিস্কুট রেখে দিলে দু’দিনেই পাত্রে ভিজেভাব দেখা যায়। এক টুকরা ড্রাই সল্ট রেখে দিলে দেখবেন ভিজেভাব দূর হয়ে যাবে, বিস্কুটও মচমচে থাকবে।
✪ মশা, মাছি ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বর্ষাকালে খুব বেশি দেখা যায়। তাই ফেলে দেয়া চায়ের পাতা ভালো করে শুকিয়ে ধূপের মতো ব্যবহার করলে উপকার পাবে। দেখবেন চা-পাতার পোড়া গন্ধে পোকা-মাকড় পালিয়ে দূর হবে।
✪ মশা-মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে চাইলে কয়েকটা কর্পূর পানিতে ভিজিয়ে ঘরের এক কোণে রেখে দিন। দু’দিনেই মশা-মাছির উপদ্রব কমে যাবে। পিঁপড়া দূর করতে ঘর মুছুন পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে।
বর্ষায় প্রয়োজন আপনার সার্বিক সুস্থতা। গ্রীষ্মের প্রখর তাপদাহের পর প্রকৃতিতে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিতে বর্ষাকালের তো বিকল্প আমাদের কাছে নেই। আমাদের প্রিয়ঋতুর মধ্যে বর্ষার নাম তো সবার আগেই আসে। কারণ এই ঋতু প্রকৃতিকে নতুন রূপ দেয়।
বৃষ্টির আবেদন চতুর্মুখী। বৃষ্টির অপরূপ দৃশ্য আমাদের মনে কুহক জাগায়। মায়াবি রূপ আমাদের মোহিত করে, আন্দোলিত করে শিহরিত করে।