বাংলাদেশের রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি আর প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করবেন না। লেখালেখি করেই অবসর জীবনযাপন করবেন তিনি।
দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে বঙ্গভবন ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ পরিকল্পনার কথা জানান বিদায়ী রাষ্ট্রপতি।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না।
দেশের সব রাজনীতিবিদকে মানুষের জন্য রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়েছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, ‘একটি কথাই বলব, রাজনীতিবিদরা যেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করেন। তাহলেই রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। দল-মত নির্বিশেষে সকলের কাছে আমার একই প্রত্যাশা।’
নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রত্যাশা বিষয়ে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি যেন সাংবিধানিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এটাই আমার এবং জাতির প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গভবনে ১০ বছরের অধ্যায় নিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করেছি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও ৪১ দিন দায়িত্ব পালন করেছি। ভারত বা পাকিস্তানেও কেউ এত দিন দায়িত্ব পালন করেননি।’
অবসর জীবন বিষয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাড়িতে বসে হয়ত কিছু লেখালেখি করব। তবে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করার পরিকল্পনা আমার নেই। কারণ, দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়েছে, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করেছে; তাই আবার আমি রাজনীতি করব বা অন্য কোনো পদে যাব, এটা হবে না। এটা করলে মনে হবে, আমি দেশের মানুষকে হেয় করব।’
বঙ্গভবনে রাজসিক সংবর্ধনা শেষে দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় পৌঁছান সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি আজকের দিনে পুরো দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দেশবাসীর দোয়া ছিল, আমার এলাকার মানুষের দোয়া ছিল বলেই আমি দীর্ঘ মেয়াদে জনগণকে সেবা দিতে পেরেছি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আমাকে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞ। এ দেশের মানুষ আমাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে দুই মেয়াদে নির্বাচিত করেছে। আবার রাজনীতি করলে এ দেশের মানুষকে হেয় করা হবে। সেটা আমি করব না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আবদুল হামিদ বলেন, অনেক সময় বলেছি, আমি বন্দিজীবনে আছি। এর থেকে আমি মুক্তি পাচ্ছি। এখন সাধারণ নাগরিক হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারব। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আগেও বেশ কয়েকবার বলেছি, আমার বেশিরভাগ সময় থাকার ইচ্ছা হাওরে। ঢাকায়ও থাকতে হবে, আবার কিশোরগঞ্জেও থাকতে হবে। তবে, সবচেয়ে বেশি সময় থাকার ইচ্ছা হাওরে।
এর আগে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তার কার্যালয়ের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেন। বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন।
এরপর বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেওয়াসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রায় বঙ্গভবন থেকে রাজধানীর নিকুঞ্জে নিজের বাড়ি রাষ্ট্রপতি লজের উদ্দেশে রওয়ানা দেন মো. আবদুল হামিদ।
প্রসঙ্গত, প্রবীণ রাজনীতিক মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এর পর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে মো. আবদুল হামিদ কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর কিছু দিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন মো. আবদুল হামিদ।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এ সফল রাজনীতিবিদ।