Monday, December 2, 2024

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে কাজ হারাতে পারে সাংবাদিকরা

বিশেষ প্রতিনিধি: সাংবাদিকের চাকরির জায়গায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করতে চলেছে। এমন কথাই বললেন, জার্মান প্রকাশক অ্যাক্সেল স্প্রিংগার।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের মুখপাত্র অস্কার লিউ জানালেন, চ্যাটজিপিটিকে সাংবাদিক হিসেবে রিপোর্ট লিখতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে রিপোর্ট লিখতে ২ দিনের বেশি সময় লাগে, জিপিটি প্রমট মাত্র ৪০ সেকেন্ডেই ৯০০ শব্দের গ্রহণযোগ্য ও নির্ভর করার মতো রিপোর্ট আধুনিক ভাষায় লিখে দিয়েছে।

তাহলে দুদিনের শ্রম আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘোরাঘুরির বদলে মাত্র ৪০ সেকেন্ডে প্রত্যাশিত রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে তা ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার ঝুঁকির কথাও ইঙ্গিত করে। কিন্তু যারা প্রমট (সঠিক শব্দের দিকনির্দেশানা) ব্যবহার জানবেন তারাই ভবিষ্যতের সাংবাদিকতায় টিকে থাকবে। নতুবা সময়ের নতুন দৌঁড়ে চাকরি হারানোর ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হবে, তা বলা যায় নিশ্চিত করেই।

সাংবাদিকের কাজের জায়গায় চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম নিজের সুদৃঢ় অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছে। ফলে সারা বিশ্বে সব ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার সাংবাদিকতায় ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন জার্মানির স্বনামধন্য মিডিয়া গ্রুপের সিইও অ্যাক্সেল স্প্রিংগার।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড অ্যান্ড ডাই ওয়েল্টে’ কর্মী ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়াতে এবং পরিপূর্ণ ডিজিটাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে কর্মী ছাঁটাই করার কথা ভাবছে। কারণ অটোমেশন এবং এআই ক্রমবর্ধমানভাবে সাংবাদিকের কর্মক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতে শুরু করেছে। সুতরাং সাংবাদিকতা পেশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্রমেই চাপ ও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আগের চেয়ে তুলনামূলক চাপে ফেলবে।

সবে শুরু করা মাত্রই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চ্যাটজিপিটি। কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা (AI) টুলগুলো তথ্যে সংস্কৃতিতে রাতারাতি ‘বিপ্লব’ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব সাংবাদিকতার তুলনায় বিশেষায়িত ‘তথ্যের একত্রিতকরণে’ ভালো করবে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দিয়েছেন।

ডিজিটাল সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আসছে তা অনুমেয়। আর সত্যটা বুঝে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা প্রকাশনা সংস্থা ও গণমাধ্যমের জন্য অতিব জরুরি। বিশেষ করে তথ্য বিশ্বের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভুতপূর্ব ভবিষ্যতের কথাই বলছে। যারা শুধু মৌলিক বিষয় নিয়ে কাজ করবেন তারাই টিকে থাকবেন আসছে সময়ে। কথাগুলো জানালেন জার্মান মিডিয়া গ্রুপ ‘বিল্ড অ্যান্ড ডাই ওয়েল্ট’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডুয়েপফনার।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (ওপেনএআই) স্মার্টফোনে মাইক্রোসফট বিং সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেও সব ধরনের তথ্যসেবা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রাখে। সারাবিশ্বের অনেকেই আছেন এআই সম্পর্কে জেনেছেন, কিন্তু এখনও তার সঙ্গে কাজের ধরনে চ্যাট করা হয়ে ওঠেনি। তবে ক্রমান্বয়ে মানুষের সে ভয়টা কেটে যাবে। তখন মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

অ্যাক্সেল স্প্রিংগার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কারণে ঠিক কতজন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করবেন তা সুস্পষ্ট করেননি। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিবেদক, লেখক বা বিশেষজ্ঞ সম্পাদকদের সংখ্যায় তেমন কোনো কাটছাঁট করা হবে না। শুধু সাধারণ মানের কর্মীদের বিষয়ে নিতে হবে কঠিন সিদ্ধান্ত।

ডুয়েপফনার তার কর্মীদের বলেছেন, ডিজিটাল মিডিয়া আউটলেটে অবশ্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মূল ভাষ্যের ওপর দৃষ্টি বাড়াতে হবে। তাৎক্ষণিক ঘটনার দ্রুত সত্যতা অনুসন্ধানে চ্যাটজিপিটি দারুণ সফলতা দেখিয়েছে। যা সাংবাদিকতার দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শঙ্কার কথা তাই বারবার আলোচনায় উঠে আসছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে শুধু সীমাহীন তথ্য চটজলদি বিশ্লেষণ করতে পারে, তা কিন্তু নয়। সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তার সত্যতাও নিশ্চয়তার সঙ্গে যাচাই করতে পারদর্শী। রিপোর্টে (গবেষণা) বক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কটি মিডিয়া আউটলেট ইতিমধ্যেই ‘এআই’ দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করতে শুরু করেছে। স্বনামধন্য রয়টার্স তার মধ্যে অন্যতম।

সামাজিক মাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ ট্র্যাক করা ও টুইটের সত্যতা যাচাইয়ে নিউজ ট্রেসার হিসেবেও কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়তই নিজেকে আপডেট করে নেয় (এআই) প্রমট টুলস।

সংবাদ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সতর্ক থাকতে হবে সাংবাদিকদের। কারণ অ্যালগরিদম মিথ্যা বা বিভ্রান্ত করতে পারে। কারণ তারা মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম। আর মানুষের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা আছে। লজিক্যাল প্যাটার্ন ভুল উপসংহারে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ সাংবাদিকদেরকে সব সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রমট থেকে আসা তথ্যবার্তা যাচাই-বাছাই করার সক্ষমতা নিশ্চিতে সুদক্ষ হতে হবে। তথ্য পরীক্ষায় বিবেচ্য হবে ফ্যাক্ট চেক (সন্দেহ), ক্রস চেক আর নথির সঙ্গে প্রদেয় তথ্য যাচাইয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা। তথ্যের অপার সম্ভাবনা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাট দুনিয়া। যা নিজে থেকেই আপডেট হয় প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্তে।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর