পৃথিবীকে আরও সুন্দর অনুভব দিয়ে দেখতে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নয়, রবীন্দ্রনাথ নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন জীবনের সব মাধ্যমে। তাই সংকটের বিহ্বলতায়, কিংবা বেদনার নিমগ্নতায় অথবা প্রাপ্তির প্রাচুর্যতায় বাঙালির জন্য তিনি এক পরম আশ্রয়। বাঙালির চেতনায়, প্রেরণায়, ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, আছেন, থাকবেন তাঁর বিশাল, বিরাট, ব্যাপক উপস্থিতি দিয়ে।
নোবেলজয়ী সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্বসংসারের অনুপ্রেরণা।
‘ভারী কাজের বোঝাই তরী কালের পারবারে
পাড়ি দিতে গিয়ে কখন ডোবে আপন ভারে।
তার চেয়ে মোর এই ক-খানা হালকা কথার গান
হয়তো ভেসে বইবে স্রোতে তাই করে যাই দান’।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই চারটি চরণ লিখেছিলেন বুড়িগঙ্গায় বসে। তাঁর দ্বিতীয়বারের ঢাকা সফরকালে, একজনের অনুরোধে। আসলেই তাঁর সমগ্র সাহিত্য সাধনা ছিল সাধারণ মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, আনন্দ-বেদনা ঘিরে। তীব্র ও তীক্ষ্ণ ভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন যারা নিভৃত অন্তরালে থেকে যায় তাদের কথা। এবং সেটা ফুটিয়ে তুলতে তিনি কোন কঠিন ভাব বা ভাষার ব্যবহার করেন নি। করেছেন এক্কেবারে সহজ-সরল ভাষা।
কবি তাঁর ‘সোনার তরী’ কাব্যের বর্ষাযাপন কবিতায় তাই বলেন-
ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতি রাশি, প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু’চারটি অশ্রুজল,
নাহ বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে অনুভব করতে শিখিয়েছেন আমাদের। মানবিক হওয়ার কথা বলেছেন কবি। জীবন আর শিক্ষা যে পৃথক নয়, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমান পৃথিবীতে সভ্যতার যে নিদারুন সংকট। এমন সংকটকালে রবীন্দ্রনাথের দর্শন সবাইকে আরও বেশি মানবিক হওয়ার প্রেরণা দেয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে মৃত্যু জীবনের পরিসমাপ্তি নয়, বরং এক জীবন থেকে মহাজীবনে উত্তরণের একটি সোপান মাত্র। তাই মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ আলিঙ্গন করেছেন সহজভাবে সাবলীল চিত্তে। তাই শেষলেখা কাব্যের ১ সংখ্যক কবিতায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিঃশঙ্কচিত্তে রবীন্দ্রনাথ লেখেন :
‘সমুখে শান্তিপারাবার, ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।
তুমি হবে চিরসাথি, লও লও হে ক্রোড় পাতি,
অসীমের পথে জ্বলিবে জ্যোতি,ধ্রবতার-কার।‘
মানুষকে রবীন্দ্রনাথ চিরযাত্রী বলেছেন। মনুষ্যত্বের সারসত্তার দিকে তার নিয়ত অভিযাত্রা। যে-যাত্রার কথা রয়েছে এলিয়টের ‘দি জার্নি অব দি ম্যাজাই’ কবিতায়। পূর্বদেশীয় বৃদ্ধরা দীর্ঘ যাত্রার অন্তে তীর্থে পৌঁছে বলেছিল, ‘মাতা দ্বার খোলো’। শিশু যিশুখ্রিষ্টের মতো মহামানব তথা শাশ্বত মানবের আবির্ভাব ঘটে তখন। ‘শিশুতীর্থে’র যাত্রীরাও ভয়াবহ ওঠাপড়া বাদবিসংবাদের ভিতর দিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই চিরমানবতার তীর্থে উপনীত হয়েছিল। ‘সভ্যতার সংকটে’র যন্ত্রণাদীর্ণ কবিও শেষ পর্যন্ত গেয়ে উঠেছেন—‘ওই মহামানব আসে।/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে’। চিরন্তন মানুষ হওয়ার জন্যই যাত্রা সর্বমানবের।
রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনারকবি। পূর্ববঙ্গ তার শিল্পীসত্তা, মানবসত্তা এবং ঐক্য ও সম্প্রীতির আভায় সমুজ্জ্বল। ফলে সাধারণ বাঙালির দুঃখ-বেদনার কথক হিসেবে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেয়েছি, তা পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন। শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন।
রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্তপ্রেরণার উৎস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান মুক্তিকামী বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।
দুই বিঘা জমি কবিতায় নিরীহ দরিদ্র প্রজা উপেন ঋণের দায়ে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় শুধু ভিটেমাটি টুকু আশ্রয় করে পড়ে আছেন। অবশেষে বাবুর নজর পড়ে তার ভিটেমাটির ওপর। রবীন্দ্রনাথ অতন্ত্য হৃদয়গ্রাহীখভাবে এর বর্ণনা করেছেন।
শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
কিন্তু উপেনের ভিটেখানি রক্ষা পায়নি। দেড়মাস পরের ডিক্রি- মিথ্যে দেনার খতে জমিটুকু বাবুর দখলে চলে গেল। তখনই কবি উচ্চারণ করেন কবিতার সবচেয়ে মর্মস্পর্শী কথাটি। যেটি আজকের সমাজের জন্যও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রায়োগিক।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরিভুরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
শোষক, অত্যাচারীর স্বরূপ উন্মোচনে দরিদ্রের ব্যাথার নিকটতম প্রতিবেশী হয়ে এমন কথা কে উচ্চারণ করতে পেরেছে? রবীন্দ্রনাথ একজন জমিদার হয়েও প্রজাদের বেদনা, কষ্ট, দুঃখ, কান্না অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপলদ্ধি করেছেন বলেই তিনি নিপুণ তুলিতে তা পাঠকের সামনে তুলে ধরে জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিতে পেরেছেন।
ভিটে মাটি হারিয়ে উপেন সন্ন্যাসীর বেশে ষোল বছর পথে পথে ঘুরে বেড়ান কিন্তু দুই বিঘা জমির কথা কখনও ভুলতে পারেনি। আর এখানেই তার স্বদেশ প্রেম মূর্ত হয়ে ওঠে। একেই বলে শেকড়ের প্রতি টান, নাড়ির দিকে ফেরা। আপন বাসভূমের পথে চলা। কবি অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেন-
নমোনমো নম, সুন্দরি মম জননী বঙ্গভূমি।
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি’।
অবশেষে স্বদেশের মায়ায় উপেন ফিরে আসে তার গ্রামে। কিন্তু তার চেনা সেই দুই বিঘা জমি আর তেমন নেই। তার চারদিকে উঁচু প্রাচীর, ভেতরে ঢোকা যায় না। কিন্তু সেই নতুনত্বের মাঝেও সেই আমগাছটা রয়ে গেছে তখনও। হঠাৎ তার সামনে দু্টো আম পড়ে গেল। উপেন একে মায়ের দান ভেবেছে। কবির ভাষায় ‘ স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকিনু মাথা’। আচমকা জমদুতের মত মালি এসে আম চুরির অপরাধে উপেনকে বাবুর কাছে নিয়ে গেল। বাবু তখন মাছ ধরছিলেন। সব শুনে বাবু বললো ‘বেটা সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। আর ঠিক তখনই কবিতার মর্মবাণীটিও কবি পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলে ফেলনেন। যা সমাজের নিঁখুত চিত্র। আজো আমদের সমাজ ঠিক তেমনই আছে যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের সময়। উপেনের কন্ঠে উৎসারিত শেষ দুটি লাইন-
আমি শুনে হাসি, আঁখি জলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে’।
কোনো মনুষ্যকৃত সৃষ্টিকর্ম কখনো শাশ্বত স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে মানুষের অমরত্বকে ধরে রাখতে পারে না। মানুষ ক্ষণে ক্ষণে তার ওই স্বকৃত সৃষ্টিকে ছাড়িয়ে যায়, সেখানেই তার অমরত্ব বা মনুষ্যজীবনের সংজ্ঞা লুক্কায়িত।
‘শা-জাহান’ কবিতায় এ চিন্তাটির পরম্পরা অদ্ভুত নিটোল কাব্যময়। কবি প্রথম স্তবকে ইঙ্গিতে বলছেন, শা-জাহান তাঁর প্রেয়সী মমতাজের মৃত্যু হলে তাঁর জন্য যে ‘অন্তরবেদনা’, ‘একটি দীর্ঘশ্বাস’ কিংবা ‘একবিন্দু নয়নের জল’ অনুভব করলেন, তারই ফলে গড়লেন ‘কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল/এ তাজমহল।’ কিন্তু তাতে কী হলো? সম্রাটের হৃদয় কি তাতে বাঁধা পড়ে রইল? জীবনে যেখানে ‘রাজ্য’, ‘সিংহাসন’, ‘সৈন্যদল’ টুটে যায় ‘স্বপ্নসম’, যেখানে সব কিছু ভাঙাগড়ার অধীন, সেখানে ‘ভুলি নাই, ভুলি নাই, ভুলি নাই প্রিয়া’ বললেই হলো?
না, সম্রাট-কবির আত্মা তাজমহলের প্রস্তরীভূত সৌধ ছেড়ে সম্মুখে বহমান। তাজমহলকে জীবন্ত ব্যক্তিক সত্তা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাই বলাচ্ছেন, ‘প্রিয়া তারে রাখিল না, রাজ্য তারে ছেড়ে দিল পথ,/রুধিল না সমুদ্র পর্বত।/আজি তার রথ/চলিয়াছে রাত্রির আহ্বানে/নক্ষত্রের গানে/প্রভাতের সিংহদ্বার-পানে।/তাই/স্মৃতিভারে আমি পড়ে আছি,/ভারমুক্ত সে এখানে নেই।’ এখানে ‘আমি’ অর্থ ‘তাজমহল’। তাই কবি দ্বিধাহীন বলতে পারেন-
তোমার কৃত্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ,
তাই তব জীবনের রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার
বারবার।
তাই,
চিহ্ন তব পড়ে আছে, তুহি হেথা নাই।
মানুষের কীর্তি অবশ্যই অসাধারণ মাইলফলক; তাকে স্মরণে রাখার, তাকে অমরত্ব দেওয়ার একটি শক্তিশালী উপকরণ। কিন্তু মুদ্রার আরেক পিঠের সত্য, যেটি রবীন্দ্রনাথ ‘‘শাজাহান’ কবিতার মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছে দিলেন, সেটি হলো শুধু কীর্তি বা কর্ম মানুষকে সংজ্ঞায়িত করবে তা নয়, এর বাইরেও রহস্যময় একটি ব্যাপার মানুষের মহত্ত্ব এবং তার মনুষ্যত্বকে পরিচিত করে তোলে। সে অমোঘ ডাক : ‘আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে।/তার নিমন্ত্রণ লোকে লোকে/নব নব পূর্বাচলে আলোকে আলোকে। সবকিছু ছাপিয়ে কারিগরযে বড় তারই একটি অনুপম দৃষ্টান্ত শা-জাহান কবিতা।
ভাষা, সঙ্গীত এবং মানব চেতনার মধ্যে সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে আলিঙ্গনের গুরুত্ব লালন, পালন ও ধারণ করে রচিত কবিতা ‘ভাষা ও ছন্দ’। এ কবিতা মানব মুক্তিকে যুক্তি দিয়ে শাণিত করেছে, পরিপুর্ণ কাব্যসত্ত্বা নিয়ে। কবিতার প্রতিটি লাইন পাঠ করে এক আনন্দলোকিক মঙ্গলসূত্রের সন্ধান পায় মানবচিত্ত। তার মধ্যে দিয়েই সত্য সুন্দর সদা বিরাজ করে। কবিতার এক পর্যায়ে এসে কবি বললেন-
‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি ঘটে যা তা সব সত্য নহে
কবি তব মনোভূমি, রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য বলে যেনো’।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বারবার কেঁপে উঠেছে উপমহাদেশ। ধর্মের নামে স্বার্থান্বেসী মহল ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেত এখনে সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতা ছড়িয়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। অসংখ্য প্রাণের বলি এসব দাঙ্গা। মনুষ্যত্বের এক নির্লজ্জ পরাজয় এসব সন্ত্রাস। এর বিরুদ্ধে কবি সব সময় ছিলেন সরব, সোচ্চার, সচিকত। ভারতে সে যুগেও হিন্দু-মুসলিম বিতর্কের অন্যতম বিষয় ছিলো রাম জন্মভূমি বনাম বাবরী মসজিদ। হিন্দুদের অভিযোগ ছিলো সম্রাট বাবর যেখানে বাবরী মসজিদ স্থাপন করেছেন সেখানেই ছিলো দেবতা রামের জন্মভূমি। এ নিয়ে উত্তেজনার পারদ বহুবার তুঙ্গে উঠেছে ভারতের প্রধান দুটি সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ, সংহতি বিনষ্ট হয়েছে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে, যার অনিবার্য ফল ছিলো ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তি। কবিগুরু এর বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। সাম্প্রদায়িকতার টুটি টিপে ধরতে চেয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন উপরোক্ত লাইনে, রামের জন্মস্থান কোথায় সেটা বড় কথা নয়, রামের আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে, মনে ও মননে স্থান দিতে হবে, তাহলে হৃদয়ে অযোধ্যার চেয়ে রাম সত্য হয়ে বসবাস করবে, বিরাজ করবে। অর্থাৎ রবীন্দ্র কাব্যের মূল সুরই হল মানুষের ঐক্য ও সম্প্রীতি।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পচর্চার মাধ্যমের প্রতিটি শাখায় তাঁর অনন্য ও অনায়াস বিচরণ সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বকবির সমস্ত সৃষ্টির মূলে নিহিত মানবতাবাদ তাঁকে বিশিষ্টতা দান করেছে। শান্তি ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের সাধক। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে সোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের বৈশ্বিক যাত্রাকে বেগবান করেছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্য এর মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছে।
জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত- উদ্ভাসিত করে, এগিয়ে যাবার প্রেরণা যোগায়। আমাদের চিন্তা, বোধ ও অনুভূতিতে কবিগুরু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তাঁর কাছে গেলেই ‘অভয় বাজে, হৃদয় মাঝে’।
রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি সে কথাই যেন উদ্ভাসিত হয়েছে শামসুর রাহমানের ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ কবিতায়, সে-কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উদ্ৃব্দত করে শেষ করি এই রচনা :
আমার দিনকে তুমি দিয়েছ কাব্যের বর্ণচ্ছটা
রাত্রিকে রেখেছো ভ’রে গানের স্ম্ফুলিঙ্গে, সপ্তরথী
কুৎসিতের বূ্হ্য ভেদ করবার মন্ত্র আজীবন
পেয়েছি তোমার কাছে। ঘৃণার করাতে জর্জরিত
করেছি উন্মত্ত বর্বরের অট্টহাসির কী আশ্বাসে।
(শামসুর রাহমান/’রবীন্দ্রনাথের প্রতি’)
আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও অমানবিকতা প্রতিরোধের মাধ্যমে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের উজ্জ্বল বাতিঘর।
-মাহবুবুর রহমান তুহিন, সিনিয়র তথ্য অফিসার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।