শরীরের মেদ কমাতে অনেকেই নিয়ে থাকেন নানা রকম পদক্ষেপ। জিম করে, ডায়েট করে, যোগব্যায়ামসহ নানা কিছু করে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু জেনে অবাক হবেন, খুব সহজ উপায়ে এবং অতি পরিচিত একটি উপাদানই কমাতে সাহায্য করবে আপনার মেদের সমস্যা। আর এই জাদুকরী উপাদানটি হচ্ছে আদা।
বহু শতাব্দী ধরে আদাকে স্বাস্থ্যকর ও বহু গুণসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ধরা হয়। আদার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী, ভাইরাসরোধী, প্রদাহরোধী উপাদান। আদার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি-কমপ্লেক্সের ভাল উৎস। এর পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
এছাড়া আদা ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন মিনারেলের অন্যতম উৎস। আদা হজম পদ্ধতি ভালো করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, লিভার পরিষ্কার রাখে, অ্যাজমা ও হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
সকালে উঠে এক কাপ আদা চা পান করলে একাধিক রোগ-ব্যাধি দূরে থাকবে। তালিকায় সুগার, প্রেশারের মতো মারণ অসুখও রয়েছে। এছাড়া আর কী কী সমস্যা থেকে রেহাই মেলে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, চা এমনিতে ভীষণই রিফ্রেশিং ড্রিংকস। তাই চা খেলে শরীর চাঙ্গা লাগে। মন ভালো হয়ে যায়। তবে এই পানীয়ে আদা মিশিয়ে নিতে পারলে এর গুণ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এমনকী বহু ঘাতক অসুখ কাছে আসার সুযোগ পায় না।
এক্ষেত্রে চায়ে এক টুকরো আদা মেশালেই এর গুণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। আসলে আদায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভানয়েডসের ভাণ্ডার। এই দুই উপাদান একত্রে মিলে শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচায়।
প্রসঙ্গত, সারাদিনের যে কোনও সময় চা চলতে পারে। তবে সবথেকে ভালো হয়, সকাল সকাল এক কাপ আদা চা খেয়ে নিতে পারলে। এতেই দূরে থাকবে একাধিক রোগ।
ওজন এবং ব্লাড সুগার কমায়
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতেও অত্যন্ত কার্যকরী আদা চা। এই চা খেলে দেহের ফ্যাট দ্রুত ভেঙে যায়। এমনকী শরীরে নতুন করে ফ্যাট জমতেও বাধা দেয় এই পানীয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে এই চা হতে পারে আপনার নিত্যসঙ্গী। এদিকে টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের জন্যও এই চায়ের কোনও বিকল্প নেই। আদা চা দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কারণে ৩ মাসের গড় সুগার বা এইচবিএ১সি স্কোর অনেকটাই কমে।
ব্যথানাশক ক্ষমতা রয়েছে
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ব্যথায় আক্রান্ত রোগী একজন না একজন রোগীর খোঁজ ঠিক পেয়েই যাবেন। বিশেষত, মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। জানলে অবাক হয়ে যাবেন, সামান্য আদা চা খেলেই কিন্তু ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। আদায় রয়েছে জিঞ্জেরল নামক একটি উপাদান। এই উপাদান ব্যথা কমানোর পাশাপাশি প্রদাহনাশ করতেও সাহায্য করে। তাই যাঁরা ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত আদা চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতেই পারেন।
ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী
ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর জীবনে কষ্টের সীমা থাকে না। রোগীর পাশাপাশি ভুগতে হয় তাঁদের পরিবারকেও। তাই যেন তেন প্রকারেণ ক্যানসার প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আদা চা। ৭টি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এতে থাকা জিজ্ঞেরল ও শ্যাগল নামক দুটি উপাদান ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এমনকী দেহ থেকে মৃত কোষকে বের করে দিতেও সাহায্য করে এই দুই উপাদান। ফলে ক্যানসার প্রতিরোধ করতে অনেকটাই সুবিধা হয়।
মস্তিষ্কের বন্ধু
বর্তমানে একটু বয়স হলেই অনেকে ডিজেনারেটিভ ডিজিজে ভুগতে থাকেন। মূলত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহজনিত কারণে অ্যালঝাইমার্সের মতো অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এই অসুখে আক্রান্ত রোগী সব কিছু ভুলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এনাদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অতিবাহিত করাও কঠিন হয়ে যায়। তবে সুখবর হল, আদা চা মস্তিষ্কের ডিজেনারেশন রোধ করতে পারে। ফলে এই ধরনের রোগব্যাধি থাকে দূরে।
ব্লাড প্রেশার কমায়
দিনে এক থেকে দু’কাপ আদা চা প্রত্যেকেরই খাওয়া উচিত। এতে একাধিক উপকার মেলে। বিশেষত, ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অবশ্যই আদা চা খান। হেলথলাইন জানাচ্ছে, নিয়মিত আদা চা পান করা ব্যক্তিদের ব্লাড প্রেশার সহজেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এমনকী রক্তে কমে কোলেস্টেরলে মাত্রা। এই কারণে আদা চা হার্ট সুস্থ রাখার কাজেও ধন্বন্তরির মতো কাজ করে। তাই হার্টের রোগে আক্রান্ত না হতে চাইলেও আদা চা নিয়মিত খেতেই পারেন।
যেভাবে তৈরি করবেন আদা চা
খোসা ছাড়িয়ে এক ইঞ্চি টুকরো করে আদা কেটে নিন। এই টুকরোগুলো চুলায় ফুটন্ত পানিতে রেখে ঢেকে দিন। যদি টি-ব্যাগ না ব্যবহার করেন, চা পাতা যোগ করুন। এই পানি কিছুক্ষণ ফুটিয়ে, ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করুন। মিষ্টির জন্য চিনি ব্যবহার না করে, মধু ব্যবহার করাই ভাল।
এছাড়া এক গ্লাস পানিতেও লেবুর রস ও আদার টুকরা মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমবে। ফলে ওজনও কমবে। গ্রিন টির সঙ্গে আদা কুচি মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া সরাসরি আদার রস মিশিয়ে নিতে পারেন পানির সঙ্গে। অথবা আদা চিবিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।