আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের বিপরীতে রাজস্ব খাতে সংস্কারের করে বর্তমানের চেয়ে আরো বেশি রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর করের খড়্গ নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে এই শর্ত পূরণ করতে পারে সরকার। যেমন নিম্নস্তরের সিগারেট। এতে জনজীবনে যেমন করের প্রভাব কমবে তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে। ফলে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই কর আদায় বাড়াতে হবে কমপক্ষে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বুধবার (১০ মে) ঢাকায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হলে বছরে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো মনে করে তামাকের দাম বাড়লে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব ।
নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে একমত পোষণ করে তারা জানান, দেশে মোট ধূমপায়ীর প্রায় ৮০ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। দাম কম থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই নিম্নস্তরের সিগারেটের দামের দিকে বিশেষ করে নজর দেওয়া উচিত। প্রতিবারে দেখা যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও সে হারে বাড়ে না নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম। দেশে গত ৩ অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ১ টাকা। বর্তমানে মাত্র ৪০ টাকায় মিলছে নিম্নস্তরের ১০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেট।
দীর্ঘদিন ধরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির সমন্বয়হীনতার কারণে রাজস্ব খাতেও প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের শর্ত পূরণে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর চেয়ে নিম্নস্তরের সিগারেটের দিকে নজর দিতে পারে। তাহলে সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে। মানুষের জীবন-যাপনও উন্নত হবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে সিগারেট খাত থেকে ১০-১৫ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে সরকার। গত অর্থ বছরে এই হারে ভাটা পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায় গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আয় হয় ২৮৫০০ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৩ শতাংশ। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরে সিগারেট খাত থেকে প্রবৃদ্ধি একই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আয় মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম থাকার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই রাজস্ব হারানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে নিম্নস্তরের সিগারেটের যথাযথ মূল্যবৃদ্ধি না করা। তারা আশঙ্কা করছেন, এ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি না হলে, তা সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ওপর প্রভাব ফেলবে।
নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য ৪০ টাকা (প্রতি ১০ টাকার প্যাকেট) থেকে মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো গেলে তা সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ রাজস্বের পক্ষে ইতিবাচক হবে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সরকার সিগারেটের ভলিউম বাড়ানোর পরিপন্থী। তাই, হারানো রাজস্ব ফেরত পেতে এখন ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) কে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানোর দিকেই নজর দিতে হবে।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজেটে উচ্চ ও নিম্নস্তরের সিগারেটের দামের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম তেমন একটা বাড়ে না। এজন্য সিগারেট খাওয়াও কমে না। নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই সিগারেটের ভোক্তা, ফলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে উচ্চ স্তরের দাম বাড়ানোর কারণে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়ে। তাই আমি মনে করি, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত।’