Monday, May 6, 2024

মার্কিন সিনেটে শুনানি: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশে আরও নিষেধাজ্ঞার আহ্বান

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আরও নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পন্থা অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) মার্কিন সিনেটের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনে (টিএলএইচআরসি) বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে হওয়া শুনানিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

শুনানিতে অংশ নেওয়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, রাজনৈতিক সহিংসতা এখনও বেশি হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক সমাবেশ প্রায়ই আন্তঃদলীয় সহিংসতায় পরিণত হয় এবং বিরোধী দলের বিক্ষোভ প্রায়ই পুলিশি দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়।

শুনানিটি আয়োজন করেন কংগ্রেসম্যান ও টিএলএইচআরসি কো-চেয়ার জেমস পি ম্যাকগভের্ন এবং কংগ্রেসম্যান ও টিএলএইচআরসি কো-চেয়ার ক্রিস্টফার এইচ স্মিথ। শুনানি পরিচালনা করেন কংগ্রেসের আইন গ্রন্থাগারের বৈদেশিক আইন বিশেষজ্ঞ তারিক আহমেদ। শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ক্রিস্টি উয়েদা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সিনিয়র এশিয়া গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড। এইচআরডব্লিউর জুলিয়া ব্লেকনার ছাড়া সবাই লিখিত বক্তব্য দেন।

ক্রিস্টি উয়েদা বলেন, ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‍্যাব ও এর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই সঙ্গে চলতি বছরের মে মাসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ভিসা নীতি ঘোষণা করে। আমরা বিশ্বাস করি, যতক্ষণ না বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের লঙ্ঘনের তদন্ত ও সমাধানের জন্য নিরপেক্ষ ও কার্যকর জবাবদিহি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত হবে না। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী যারা একই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের মতো ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজ সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচক বলে বিবেচিত অন্যদের নাগরিক স্থান বন্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রতিশোধমূলক গ্রেপ্তার, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়েছে। এসব করেও কর্মকর্তারা তাদের অসদাচরণের জন্য দায়মুক্তি ভোগ করেছেন। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের অবক্ষয় অব্যাহত রয়েছে।

গত কয়েক বছরের তুলনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড। তিনি বলেন, যদিও নির্বাচনী পরিবেশের আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। সব রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থকের সহিংসতা এড়ানো জরুরি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীরও সব পক্ষকে রক্ষা করা জরুরি। প্রায়ই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতার অভাব থেকে যায়। যেমন, সম্প্রতি ইসি যে দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়েছে, তারা অপরিচিত। আর পরিচিত ও সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন না দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছে বলে মনে হয়।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিরোধী দলের হাজারো কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে মামলা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সব নাগরিকের প্রতি আইনের সমান প্রয়োগ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব এড়ানো অপরিহার্য।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৮৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রয়েছে। ২০২১ সালে ১০৭ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হলেও ২০২২ সালে এ সংখ্যা ৩১-এ নেমে এসেছে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ৮ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশিরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন তা থেকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের টম লেনটস মানবাধিকার কমিশনকে তার ক্ষমতার সম্পূর্ণ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিরা যে মানবিক মূল্য পরিশোধ করছে তা কমাতে আমরা মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনকে অনুরোধ করব তারা যেন তাদের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে।

- Advertisement -spot_img

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর